বোয়ালমারী প্রতিনিধি:বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলা ও পৌর শাখার কমিটি সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়েছে। এ নতুন কমিটিকে কেন্দ্র করে বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুই পক্ষ পৌর সদরে পৃথক কর্মসূচি পালন করেছে। এক পক্ষ খুশি হয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা করেছে। অপর পক্ষ কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় বিক্ষোভ মিছিল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। এ নিয়ে শনিবার দিনভর শহরে আতংক থাকলেও কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বোয়ালমারী উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলনের ৪ মাস পর এবং পুরনো কমিটি ঘোষণার দশ বছর পর গত বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত কমিটিতে সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম সমর্থকদের একচেটিয়া আধিপত্য দেখা যায়। প্রতিপক্ষ উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর পক্ষের হাতেগোনা কয়েকজন ওই কমিটিতে স্থান পায়।
খন্দকার নাসির ও ঝুনু মিয়া উভয়েই ফরিদপুর-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। এনিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছে। ঘোষিত কমিটিতে উপজেলা শাখার তিন নম্বর সহসভাপতি করা হয়েছে ঝুনু মিয়াকে। অপরদিকে উপজেলা কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল ইসলামকে আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সঞ্জয় সাহাকে। এরা উভয়েই খন্দকার নাসিরের অনুসারী। পৌর শাখায় সভাপতি করা হয়েছে সাবেক কাউন্সিলর আ. কুদ্দুস শেখকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে ইমরান হোসাইনকে। এরাও খন্দকার নাসিরের অনুসারী।
উ
পজেলা ও পৌর কমিটিতে স্থান পাওয়া খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থকরা শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল ৫টার পরে স্থানীয় চৌরাস্তা থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ডাকবাংলো সড়কে গিয়ে শেষ হয়। তাদের মিছিল থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে অভিনন্দন জানানো হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির নবগঠিত উপজেলা কমিটির সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সাহা, পৌর কমিটির সভাপতি আ. কুদ্দুস শেখ, সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসাইন, সহসভাপতি খান আতাউর রহমান, সাতৈর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাফিউল আলম মিন্টু প্রমুখ।
অপরদিকে নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, মশাল মিছিল এবং সড়ক অবরোধ করেছে বিএনপির অপর অংশের নেতা শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর অনুসারীরা। ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন ও আওয়ামী লীগের পদ-পদবিতে থাকা নেতাকর্মীদের নবগঠিত কমিটিতে স্থান দেওয়ার অভিযোগে শনিবার বিকেলে এসব কর্মসূচি পালন করে। পৌরসভার ব্যস্ততম এলাকা ওয়াপদা মোড়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ঘন্টাখানেক সড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এতে মাইজকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভ ও মশাল মিছিলে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান বাবু, উপজেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব নাজিম উদ্দিন মিলু মিয়া, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ডা. আব্দুস সবুর, পৌর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কালা মিয়া, বোয়ালমারী সরকারি কলেজের সাবেক জিএস ও বোয়ালমারী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মুকুল, সাবেক কাউন্সিলর শেখ আতিকুল আলী ও শেখ আজিজুল হক, শেখর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রইসুল ইসলাম পলাশ প্রমুখ।
দুই পক্ষের কর্মসূচি ঘিরে শহরে আতঙ্ক থাকলেও কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। থানা পুলিশ সর্বোচ্চ সর্তকতা অবস্থায় ছিলো বলে বোয়ালমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আল আমিন জানান।
বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এবং বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু বলেন, ‘বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির লোকজনদের নিয়ে প্রকৃত বিএনপির নেতা, কর্মীদের বঞ্চিত করে একপক্ষীয় কমিটি করা হয়েছে।’
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন বলেন, ‘দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে এবার কমিটি করা হয়েছে। যারা দলের জন্য শ্রম ও মেধা দিয়ে রাজপথে থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, সেই সব নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করায় বিএনপি আরও শক্তিশালী হবে।’
Leave a Reply