1. khan261278@gmail.com : Oitijjho Bangla : Oitijjho Bangla
  2. oitijjhobangla24@gmail.com : Editor Panel : Editor Panel
  3. jmitsolution24@gmail.com : support :
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বোয়ালমারীতে উৎসবমুখর পরিবেশে রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত এক মৎস্যজীবীর বৈঠার আঘাতে মধুমতি নদীতে নিখোঁজ অপর মৎস্যজীবী বোয়ালমারীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গাঁজা-ইয়াবাসহ আটক ৩ বোয়ালমারীতে সাবেক মেম্বারের বাড়িতে ডাকাতি, স্বর্ণালঙ্কার-টাকা লুট বোয়ালমারীতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে মারামারি, আহত ৬ বোয়ালমারীতে পাটজাত পণ্য তৈরি ও হাতপাখা বাজারজাত করণ প্রশিক্ষণের উদ্বোধন বোয়ালমারীতে শেখ রাসেল শিশু পার্ক উদ্বোধন বোয়ালমারীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিক উদযাপন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বোয়ালমারী পুলিশের মতবিনিময় সভা ভাতা নয় পিতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান এক গণমাধ্যমকর্মী

একজন যোগেন স্যার ও কিছু স্মৃতি

  • প্রকাশিত : বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২০
  • ৬৭৩ জন পঠিত
না ফেরার দেশের তালিকাটা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১৬ নভেম্বর আমাদের ছেড়ে গেলেন আমাদের একজন প্রিয় শিক্ষক যোগেন্দ্রনাথ ভৌমিক। তিনি আমাদের কাছে যোগেন স্যার হিসাবেই সমধিক পরিচিত ছিলেন।অত্যন্ত সাদা মনের এই মানুষটির জন্ম বোয়ালমারীর মাটিতে না হলেও তিনি তাঁর আচার-আচরণের গুণে এই জনপদের মাটি ও মানুষের একজন হয়ে গিয়েছিলেন।
যোগেন্দ্রনাথ ভৌমিক স্যারের জন্মস্থান রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নলিয়া জামালপুর সংলগ্ন সাংগুরা গ্রামে। বোয়ালমারী স্যারের কর্মস্থল। ১৯৭৩ সালে বোয়ালমারী ডিগ্রি কলেজের দর্শনের প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রাপ্তির মাধ্যমে তাঁর বোয়ালমারীর সাথে সম্পর্ক।
একাদশ শ্রেণিতে যুক্তিবিদ্যার ক্লাস থেকে স্যারের সাথে আমাদের পরিচয়। কয়েকদিন ক্লাস করার পরেই স্যারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রথম প্রথম যুক্তিবিদ্যা একটু কঠিন মনে হলেও কয়েকদিন ক্লাস করার পর স্যারের দক্ষ পাঠদান কৌশলে বিষয়টা আমাদের কাছে সহজ হয়ে যায়।
স্যার কয়েকদিন ক্লাস নেয়ার পর ছাত্রদের শ্রেণি বিভাগ করে ফেলতেন, কোন ছেলেমেয়ে যুক্তিবিদ্যায় পারদর্শী হতে চায়, আর কাদের শুধু পাস করলেই চলে। সেই হিসাবেই তিনি সাজেশন করতেন। যারা জানতে চায় তাদেরকে তিনি গোটা বই পড়াতেন। তারপর পরীক্ষার আগে তাদেরকে ১০/১৫ টা প্রশ্নের শর্ট সাজেশন দিতেন। আর যারা শুধু পাস করার পড়া পড়েছে তাদের দিতেন ৫/৭ টা প্রশ্ন। এবং দেখা যেতো ৫ টার মধ্যে ৫ টা প্রশ্নই এসেছে।
একবার আমাদের কয়েকজন সহপাঠী স্যারকে ধরলো প্রাইভেট পড়ানোর জন্যে। স্যারতো অবাক। যুক্তিবিদ্যা আবার প্রাইভেট পড়তে হয় নাকি। তারপর তিনি বললেন এতোগুলো সাবজেক্ট পড়ার পর তোমরা প্রাইভেট পড়ার সময় পাবে কীভাবে?আমিতো একটা সাবজেক্ট পড়ানোর জন্যে পড়াশুনা করে রাতে ঠিক মতো ঘুমানোর সময় পাইনা। যাহোক, তোমাদের যদি সময় থাকে এসো, যুক্তিবিদ্যার সাথে ইংরেজিটা দেখিয়ে দেবো। আমাকে কোনো টাকা দেয়া লাগবেনা। সত্যি সত্যিই কয়েকজনকে তিনি প্রাইভেট পড়িয়েছিলেন, কিন্তু টাকা দিতে গেলে তিনি নেননি।
১৯৯৯ সালে তিনি ঝিনেদাহ সরকারি কে সি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে অবসরে আসেন। অবসরে আসার পর স্যারকে অনুরোধ করলাম, একটু সাপ্তাহিক চন্দনা পত্রিকায় কিছু প্রবন্ধ লেখালেখি করে সময় কাটানোর জন্যে। স্যার বললেন অবসরের পর সময় পাচ্ছিনা। মনে মনে ভাবলাম, স্যার বোধ হয় বেশি কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। স্যার ব্যাপারটা খোলাসা করার পর বুঝলাম, এবং হাসলাম। স্যার পূজা সংখ্যায় লেখা দিতে রাজি হলেন। স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম লেখাটা কখোন নিতে আসবো ? স্যার বললেন, আগামী কাল আর্লি ইন দা মর্নিং এসো। কতটা সকালে আসবো বুঝার জন্যে জিজ্ঞেস করলাম স্যার, ফজরের নামাজের আগে না পরে আসবো। স্যার হেসে বললেন, আরে না – না ফরজ টরজ না, আর্লি ইন দা মর্নিং মানে কমপক্ষে দুপুর ১২ টা। অনেক কাল গোলামি করে একটু স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি। রাতে কিছু খাওয়া দাওয়া সেরে একটু আধটু খবর দেখে ঘুমিয়ে পড়ি। যেদিন একটু আগে ঘুম ভাঙ্গে সেদিন ১২ টা। আর একটু দেরি হলে ১/২ টা বেজে যায়।
তারপর গল্প করতে করতে স্যার শুনালেন, স্যারের অবসরের কথা শুনে তাঁর নিজ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এসেছিলেন নলিয়া জামালপুর কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদানের অনুরোধ নিয়ে। স্যার তাদেরকে স্ব-সম্মানে বিদায় করে দিয়েছেন। তাদেরকে রসিকতা করে বলেছেন , অধিনের বিনীত নিবেদন লিখতে লিখতে বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি। আর অধিনের বিনীত নিবেদন লেখার সখ নেই!
দীর্ঘ ২০/২১ বছর স্যার অবসর জীবন কাটিয়েছেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। কাউকে চিনতে পারতেননা। তিনি স্মৃতিভ্রষ্ঠ হয়ে পড়েছিলেন। স্যার একেবারে অসুস্থ হবার আগে মাঝে মাঝে বোয়ালমারী বাজারে আসতেন। ঘুরে ফিরে দেখা হলে তিনি জিজ্ঞেস করতেন, তুই যেনো কে? বলতাম। কিছুক্ষণ পর আবারও প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি!
যোগেন্দ্রনাথ ভৌমিক অত্যন্ত সৎভাবে জীবন যাপন করতেন। তাঁর দুটি সন্তানকেও সৎ জীবন যাপনে অভ্যস্ত করেছিলেন। তাঁর বড় ছেলে জয়ন্ত ভৌমিক অসুস্থ বাবা-মায়ের সেবা করার জন্যে শক্তি ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে এখোন বাড়িতে সময় কাটায়। ছোট ছেলে প্রশান্ত ভৌমিক সেনাবাহিনীর লেঃ কর্ণেল পদে চাকুরিরত। স্যারের স্ত্রীও অসুস্থ।
স্যারের আত্মা শান্তিতে থাকুক। তাঁর পরিবারের সদস্যরা সান্ত্বনা খুঁজে পাক, খুঁজে পাক দুঃখ ভুলবার শক্তি ।

-কাজী হাসান ফিরোজ

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2025
Development by : JM IT SOLUTION
error: Content is protected !!