1. khan261278@gmail.com : Oitijjho Bangla : Oitijjho Bangla
  2. oitijjhobangla24@gmail.com : Editor Panel : Editor Panel
  3. jmitsolution24@gmail.com : support :
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বোয়ালমারীতে উৎসবমুখর পরিবেশে রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত এক মৎস্যজীবীর বৈঠার আঘাতে মধুমতি নদীতে নিখোঁজ অপর মৎস্যজীবী বোয়ালমারীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গাঁজা-ইয়াবাসহ আটক ৩ বোয়ালমারীতে সাবেক মেম্বারের বাড়িতে ডাকাতি, স্বর্ণালঙ্কার-টাকা লুট বোয়ালমারীতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে মারামারি, আহত ৬ বোয়ালমারীতে পাটজাত পণ্য তৈরি ও হাতপাখা বাজারজাত করণ প্রশিক্ষণের উদ্বোধন বোয়ালমারীতে শেখ রাসেল শিশু পার্ক উদ্বোধন বোয়ালমারীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিক উদযাপন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বোয়ালমারী পুলিশের মতবিনিময় সভা ভাতা নয় পিতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান এক গণমাধ্যমকর্মী

অত্যাচারী নীলকর ডানলপের সমাধি ইতিহাসের প্রয়োজনে সংরক্ষণের দাবি জানাই

  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০
  • ৪৯৭ জন পঠিত
আমীর চারু: ভারতীয় উপমহাদেশ কৃষক সংগ্রামের ইতিহাসে নীলবিদ্রোহ এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। ১৮৫৯-৬০ সালে সারা বাংলায় নীলপ্রধান এলাকায় নীলকরদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। অবিভক্ত বাংলায় নীল চাষের বিরুদ্ধে বাংলার কৃষকেরাই এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। নীল চাষের বিরুদ্ধে সারা বাংলার কৃষক মজদুর সংগ্রামী জনতা সঙ্ঘবদ্ধভাবে গণপ্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলেন।
নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচারের কাহিনী গ্রাম বাংলার জীবনকে তখন ভয়াবহ ও দুর্বিষহ করে তুলেছিল। দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পণ’ নাটক একসময় বাংলায় অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সমাজচিন্তার মধ্যেই রাষ্ট্রচিন্তার খোরাক আছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের সংযুক্তবোধ আমরা সর্বপ্রথম দেখতে পাই দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পণ নাটকে। এ মহান নাট্যকার ১৮৭৩ সালের পয়লা নভেম্বর ৪৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রায় এক শতাব্দীর মতো সময় ধরে নীল চাষ প্রচলিত ছিল। অবিভক্ত বাংলায় নীল চাষের ইতিহাস থেকে জানা যায়,‘মসিয়ে লুই বনার’ নামে ফরাসা চন্দননগরের কাছে তালাডাঙ্গা ও গোন্দল পাড়ায় সর্বপ্রথম নীলকুঠি স্থাপন করে, প্রথম নীল চাষ শুরু করেন।
সম্ভবত তারই দেখাদেখি ‘ক্যারল বুম’ নামে ইংরেজ এ দেশে সর্বপ্রথম নীলকুঠি স্থাপন করেন।
নীল চাষে কত কৃষককে যে পিতৃ-পিতামহের ভিটেবাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছিল, নীলকুঠির গুদামে অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে সকরুণ মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
ফরিদপুরের ম্যাজিস্ট্রেট ‘ডেলাতুর’ সে সময়ে তার সাক্ষ্য প্রমাণে নীল কমিশনকে বলেছিলেন-‘এমন একটা নীলের বাক্স ইংল্যান্ডে পৌঁছায় না যেটা মানুষের রক্তে রঞ্জিত নয়।’‘ইন্ডিগো কমিশনের’ মতে, ১৮৪৯ সালে বাংলায় প্রায় ৫০০ নীলকর মোট ১৪৩টি ‘ইন্ডিগো কনসালে’ কাজ করত।
এই ফার্মগুলোতে পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট নীল উৎপাদন হতো। বাংলার যে যে অঞ্চলে নীল চাষ হতো এবং যেসব স্থানে নীলের কারখানা স্থাপিত হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোনদীয়া, মুর্শিদাবাদ, বারাসত, যশোর, খুলনা, বর্ধমান, বাকুড়া, মেদিনীপুর, বীরভূম, হুগলি, হাওড়া, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, রংপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ।
মুর্শিদাবাদ জেলায় James Hill ছিলেন অন্যতম প্রধান নীলকর।
ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোয় যিনি নীলকর ছিলেন তার নাম ছিল Sp. Wise ।
তৎকালীন উত্তরবঙ্গ অর্থাৎ রাজশাহী বিভাগে ছিলেন Robert Watson of Company ।
সুন্দরবন অঞ্চলের মোড়েলগঞ্জে নীলকরবিরোধী আন্দোলনে প্রথম শহীদ হয়েছিলেন-বীর রহিমোল্লাহ।
১৮৬১ সালের ২৬ নভেম্বর তিনি তৎকালীন কুখ্যাত ইংরেজ জমিদার রবার্ট মোড়েল বাহিনীর হাতে শাহাদতবরণ করেন।
ইংরেজ নীলকর ছাড়াও Native দের কিছু কিছু ছোট ছোট নীল Concern ছিল।
এমনই একজন Native নীলকর ছিলেন,কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকনাথ ঠাকুর।
নীলকরদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের মধ্যে ছিল নারীর অবমাননা, অপহরণ, জুলুম, অত্যাচার ও ধর্ষণের নানা জনশ্রুতি।
বিষয়টি বিতর্কিত এবং এ বিষয়ে তখনো নানা মুনির নানা মত ছিল।
ফরিদপুরের ডেপুটি কালেক্টর ডেলাতুর আরো বলেছেন -‘ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বহু রাইয়তকে আমার কাছে পাঠাতে দেখেছি যাদের এপিঠ ওপিঠ বর্শাবিদ্ধ। অন্যদেরও বর্শাবিদ্ধ করে গুম করা হয়েছে। এ রকম নীলপদ্ধতিকে আমি রক্তপাত পদ্ধতি মনে করি।’
-অষ্টাদশ শতকে মধূমতি, বারাশিয়া, চন্দনা প্রভৃতি নদীর তীরবর্তী উর্বর জমিতে নীল চাষ করা হত।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার -মীরগঞ্জে তখন প্রধান কুঠি স্থাপন করা হয়েছিল।বোয়ালমারী, মধুখালী, বালিয়াকান্দী অসংখ্য নীলকুঠি ছিলো । প্রধান কুঠির অধীনে ৫২টি কুঠি ছিল।মীরগঞ্জ কুঠি ঘিরে গড়ে উঠেছিল বাজার।
প্রধান ম্যানেজার ছিলেন ডানলপ।নীল কর ডানলপ চাষীদের বাধ্য করে নীল চাষ করতে থাকেন। নীল চাষে নিরুৎসাহীদের নীল কুঠিতে ধরে এনে অমানবিক অত্যাচার করা হতো।
জানা যায় এক বিঘা জমিতে নীল উৎপাদন ৮ থেকে ১২ বান্ডিল।১০ বান্ডিলের মূল্য ছিল ১ টাকা। এই টাকা থেকেও কৃষকদের সামান্য কিছু দেওয়া হতো। পক্ষান্তরে নীলকরেরা নীল রপ্তানী করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করত।প্রতিটি কুঠি নিয়ন্ত্রনের জন্য একজন ম্যানেজার থাকত। তাকে বলা হতো বড় সাহেব।বড় সাহেবের সহকারীকে বলা হতো ছোট সাহেব।দেশীয় কর্মচারীদের প্রধানকে বলা হতো নায়েব বা দেওয়ান।নায়েবের মাসিক বেতন ছিল ৫০ টাকা।নায়েবের অধীনে ছিল একজন করে গোমস্তা।
গোমস্তারা বড় ও ছোট সাহেবের কথা মতো চলত। তারা কৃষকদের ধরে এনে বেত্রাঘাত করত। এ ছাড়াও সহজ সরল কৃষকের মা বোনদের কুঠিতে ধরে এনে নিযার্তন করত।এ জন্য ইউরোপিয়ানরা নীলকে কৃষকের নীল রক্ত বলে চিহ্নিত করেছে।
হাজী শরীয়তউল্লাহ ও তার পুত্র দুদু মিয়া অত্যাচারী নীলকরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কৃষকদের নিয়ে গড়ে তোলেন বিশাল এক লাঠিয়াল বাহিনী। এ বিদ্রোহ এক সময় গণ আন্দোলনে রূপ নেয় যা নী বিদ্রোহ নামে পরিচিত। ১৮৩৮ সালে দুদু মিয়ার নেতৃত্বে বৃটিশ নীলকরদের সাথে কৃষকদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ডানলপ সাহেব আউলিয়াপুর নামক স্থানে পরাজিত হন এবং দলবল নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান।
-এই ডানলপ সাহেবের মৃত্যুর পর তাকে আলফাডাঙ্গার মীরগঞ্জে প্রধান কুঠির পাশে সমাহিত করা হয়। পূর্বে এখানে নীল প্রস্ত্ততের জন্য চুল্লী, লম্বা চিমনি, সিন্দুক, নীল কারখানার গুদাম , ছোট বড় পাকা দালান ছিল। এখন তা ধ্বংস হয়ে মাটিতে পতিত হয়েছে।
ঊনবিংশ শতকে নীলের চাষ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় এবং মীরগঞ্জ আস্তে আস্তে জরাজীর্ণ হতে থাকে।
শেষ চিহ্ন হিসেবে পড়ে থাকে ডানলপ সাহেবে সমাধি।সম্ভাবত ২০০০ সালের দিকে কয়েকজন লোভী ব্যক্তি সমাধিতে অনেক ধন সম্পত্তি থাকতে পারে এই লোভে এক রাত্রে যন্ত্রপাতি এবং দলবল নিয়ে সমাধি ভেংগে ফেলে।
দুঃখের বিষয় তারা এ থেকে কোন মূল্যবান সম্পদ পায়নি তবে কয়েকটি পাথরের বাটি পেয়েছিল বলে লোকমুখে শুনা যায়।
বর্তমানে সমাধিটি কয়েক খন্ড ভাংগা অবস্থায় ঐ স্থানেই ।সমাধির গায়ে পাথরে খোদাই করা বাংলা ভাষায় কিছু লেখা আজও জ্বলজ্বল করছে। সেই লেখাটুকু হুবহু নিম্নে দেয়া হলো –“অকপুট পরোপকার বিখ্যাত নীল শ্রীযক্ত য়্যানেল কেম্পবল ডানলপ আয়ের নামক জিলার অন্তঃপতি ডন্ডন্যান্ড নগরে বাস করিয়া
সন ১১৯৫ সালে বঙ্গদেশে শুভাগমন করত মিরগঞ্জ প্রভৃতি নীল কুঠিতে ৬০ ষাট বতসর পর্যন্ত অভিশয় যশঃপূর্বক স্বজীবিত কাল যাবত অতিবাহিত করিয়া সন ১২৫৫ সালে কাত্তিক ও শুক্রবারে স্বর্গ হইয়াছেন বান্ধবগণ ও বেতনভোগী ব্যক্তিগণ চিরকাল তদ্বীয় গুনগান স্মরনাথ অর্থব্যয় দ্বারা স্ফোলিত পুস্তক স্থাপিত করিলেন”।
মীরগঞ্জের এই সমাধি ছাড়াও বোয়ালমারীর বানচাকীতে ডানলপের মায়ের সমাধি সহ খরসূতী, ময়নার মদনধরি, কাদিরদী,সৈয়দপুর , নড়িখালী এর নীল কুঠির ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান ।
-মীরগঞ্জ নীলকুঠি আমাদের ফরিদপুরের তথা গোটা বঙ্গ দেশের অত্যাচারী নীলকরদের শোষনের এক ছোট দৃষ্টান্ত।
তাই আমাদের উচিত মীরগঞ্জ সহ বোয়ালমারীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নীলকরদের শেষ স্মৃতিটুকু রক্ষা করা।
তা হলে পরবর্তী প্রজন্ম জানবে বাঙলী কত শোষন নিপীড়ন সহ্য করে
আজ স্বাধীনতা পেয়েছে ।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2025
Development by : JM IT SOLUTION
error: Content is protected !!