বোয়ালমারী প্রতিনিধি : ফরিদপুরের বোয়ালমারীর গুনবহা গ্রামের আতিয়ার রহমান আতি শিকদারের ছেলে রাজিব শিকদার(৩২) ইউরোপের নর্থ মেসিডোনিয়ায় মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনা নিহত হয়েছেন।
নিহত রাজিব শিকদারের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র সন্তান হারিয়ে মা-বাবা পাগল প্রায়। মাত্র তিন মাস আগে সাংসারিক সাচ্ছন্দ ফিরিয়ে আনতে ওয়াল্ডার ভিসায় পাড়ি জমিয়েছিল ইউরোপের দেশ নর্থ মেসিডোনিয়ায়। সেখানেই কাজে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন রাজিব শিকদার।
পরিবার ও এলাকাবাসী সুত্রে জানাগেছে, গত ১২ সেপ্টেম্বর এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন বাংলাদেশীসহ নিহত হন রাজিব শিকদার। শৈশব থেকেই পরিশ্রমী ও অত্যন্ত মেধাবী রাজিব বিজ্ঞান বিভাগে বোয়ালমারী সরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। পরে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে অনার্সে ভর্তি হলেও সাংসারিক অনটনে বাবার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের হাল ধরেন রাজিব। নম্র, ভদ্র ও বন্ধুবাৎসল্য স্বভাবের কারণে তার মৃত্যুতে শোকাভিভূত পৌরসভার পুরো এলাকা।
এদিকে, রাজিবকে শেষবারের মতো ছ্ুঁয়ে দেখতে চায় মা মমতাজ বেগম। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল মায়ের আর কোনো চাওয়া নেই।
একটি বারের জন্য বুকের মানিকের মুখ দেখতে চান তিনি। সন্তান হারিয়ে শোকে কাতর মা-বাবার আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়। পরিবার,আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব কেউ-ই মেনে নিতেই পারছেনা রাজিবের এই অকাল প্রয়াণ।
নিহতের মা মমতাজ বেগম আবেগ তাড়িত কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, শেষবারের মতো আমি আমার একমাত্র ছেলের মুখ দেখতে চাই। আমার বুকের মানিকের মুখ ছুঁয়ে দেখতে চাই, আমার কলিজার টুকরোর কবরডা দেশের মাটিতে যেন হয়। আপনারা আমার বাজানরে আইনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
নিহত রাজিব শিকদারের বাবা আতিয়ার শিকদার বলেন, একদিকে সন্তানের মৃত্যু শোক, অন্য দিকে বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংকের ঋণের বোঝা। সেই সাথে যোগ হয়েছে মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় জটিলতা। ব্যক্তিগত ভাবে সন্তানের মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে লাগবে প্রায় ২১ লাখ টাকা। সন্তানকে বিদেশ পাঠাতে গিয়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ধারদেনা ও ঋণ করে এখন নিঃস্ব রিক্ত। বসতবাড়ির ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। সমাজের বৃত্তবান ও সরকারের নিকট আবেদন যাতে সরকারি খরচে তার সন্তানের মৃতদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করা হয়।
বোয়ালমারী পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ইমরান হুসাইন বলেন, বিদেশে গিয়ে তিন মাস কাজ করার পরই সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, দুর্বল। ব্যক্তগত ভাবে তাদের পক্ষে মরদেহ ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। তাই আমি সরকারের নিকট আবেদন করি যাতে সরকারি খরচে তার মরদেহ ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে সরকার।
বোয়ালমারী পৌর জামায়াতের সেক্রেটারি সৈয়দ সাজ্জাদ আলী বলেন, প্রতিটি মৃত্যু বেদনাদায়ক। রাজিব একজন রেমিট্যান্স যুদ্ধা দেশের উন্নয়নের অংশিদার, পরিবারের মরদেহ ফিরিয়ে আনা সাধ্য নাই।তাই আমি সরকারসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাই, এই রেমিট্যান্স যুদ্ধার মরদেহ সরকারী খরচে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী সহোযোগিতা করা হবে।
Leave a Reply