1. khan261278@gmail.com : Oitijjho Bangla : Oitijjho Bangla
  2. oitijjhobangla24@gmail.com : Editor Panel : Editor Panel
  3. jmitsolution24@gmail.com : support :
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বোয়ালমারীতে উৎসবমুখর পরিবেশে রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত এক মৎস্যজীবীর বৈঠার আঘাতে মধুমতি নদীতে নিখোঁজ অপর মৎস্যজীবী বোয়ালমারীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গাঁজা-ইয়াবাসহ আটক ৩ বোয়ালমারীতে সাবেক মেম্বারের বাড়িতে ডাকাতি, স্বর্ণালঙ্কার-টাকা লুট বোয়ালমারীতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে মারামারি, আহত ৬ বোয়ালমারীতে পাটজাত পণ্য তৈরি ও হাতপাখা বাজারজাত করণ প্রশিক্ষণের উদ্বোধন বোয়ালমারীতে শেখ রাসেল শিশু পার্ক উদ্বোধন বোয়ালমারীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিক উদযাপন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বোয়ালমারী পুলিশের মতবিনিময় সভা ভাতা নয় পিতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান এক গণমাধ্যমকর্মী

১৮ বছর মাটির গর্তে রবিউলের শিকল বন্দি জীবন

  • প্রকাশিত : শুক্রবার, ৩০ জুলাই, ২০২১
  • ২৯৬ জন পঠিত

আমীর চারু বাবলু/ সুমন খান : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে মাটির গর্তে, কোমরে শিকল বন্দি হয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছে এক মানুষিক ভারসাম্যহীন যুবক । দরিদ্রতা আর সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্নতার ভয়ে পরিবারের বোঝা হয়েই শেষ হচ্ছে একটি সম্ভাবনাময় জীবন। এই মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের নাম রবিউল ইসলাম, সে বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের পশ্চিম বর্নিরচর গ্রামের কারী নুরুল ইসলামের বড় ছেলে।

সমাজের আর দশটি ছেলে মেয়ের মত রবিউলও স্কুলে যেত, পড়ালেখায়ও ছিল ভাল , ২০০৩ সালের দিকে তৃতীয় শ্রেনিতে পড়ালেখার সময়, মাত্র দশ বছর বয়সে মানসিক ভারসাম্যহীনতা পরিলক্ষিত হয় রবিউলের। মাতা আসমানী বেগমও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। পিতা ক্বারী নুরুল ইসলাম মুদি দোকান আর কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন। প্রাথমিক অবস্থায় ফকির, কবিরাজ, ঝাড়ফুঁক আর গ্রাম্য চিকিৎসা করিয়েছে নুরুল ইসলাম। শেষে মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞ এক চিকিৎসকের নিকট ছেলেকে নিয়ে গেলেও সে সময় আর চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের সামর্থ্য ছিলো না তার। দিনে দিনে ছেলের উন্মাদনা বেড়ে গেলে ঘরের মধ্যে শিকলে বেঁধে রাখা হয় রবিউলকে। সেই থেকে দীর্ঘ আঠারো বছর যাবত অস্বাভাবিক জীবনযাপন করছে সে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিনের একটি ভাঙ্গা ঘরের ভেতর প্রায় আট ফিট গভীর ও ১২ ফিট ব্যাসার্ধের একটি গর্তের মধ্যে সুপারি গাছের খুঁটির সাথে কোমরে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। সারা শরীর জুড়ে কাদামাটি, এলোমেলো চুল দাড়িতে একাকার । পরনে নেই কোন কাপড় । দুই হাত দিয়ে সারাক্ষণ খুঁড়ে চলেছে মাটি। পুষ্টিহীনতায় দুটো চোখ কোটরগত। কারো দিকে কোন খেয়াল নেই। কেবল মাটি খুঁড়াখুঁড়ি। আঠারো বছর ধরে একই ঘরে একই স্থানে শীত,বর্ষা, গ্রীষ্ম কাটে তার। এ গর্তেই খাওয়া, ঘুমানো, প্রাকৃতিক ক্রিয়া সাধন। ছেলের চিকিৎসার পিছনে নিজের দুটি দোকান আর দেড় একর জমি বিক্রির অর্থ সাবটাই ব্যয় করেছেন ক্বারী নুরুল ইসলাম। কিন্তু ভাল করা সম্ভব হয়নি রবিউলকে।

ক্বারী নুরুল ইসলাম বলেন, “আমার তিন ছেলের মধ্যে বড় রবিউল। দশ বছর বয়স পর্যন্ত সে স্বাভাবিক ছিল। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ একদিন অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। অনেকে বলত জ্বীনে আছড় করেছে। তখন ওঝা, ফকির, কবিরাজ, যে যখন যেখানে যেতে বলতো- সেখানে ছুটে যেতাম। একে একে দোকান,, জমি সব খুইয়েছি। এখন ভ্যান চালাই। মধুখালিতে পাবনা মানসিক হাসপাতেলের এক ডাক্তারকে দেখিয়ে সাধ্যমতো চিকিৎসার চেষ্টা করেও সুস্থ করতে পারিনি ছেলেটাকে।”

রবিউলের মা শ্রবণপ্রতিবন্ধী আসমানী বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন – “এই পেটে আমার মনিরে রাখছি, পাগল হলিও তো ফেলায় দিতি পারিনে। আমি এক বেলা খালি মনিরেও খাওয়াই। আমার বাজান কী কনো দিনই ভাল হবে নে?” এ সময় সমাজের বিত্তবানদের নিকট তার ছেলের চিকিৎসার জন্য আকুতি জানান তিনি।

রবিউলের ছোট ভাই ইনামুল হোসেন বলেন, “আমার ভাই ভাল ছিল অসুস্থতার পর বাড়ি ঘর ভাঙচুর করতো, সুযোগ পেলেই পালিয়ে যেত। তারপর থেকে ভাইকে এ ঘরে কোমরে ও পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। সারাদিন শুধু হাত দিয়ে মাটি খুঁড়ে। এই বিশাল গর্ত তার নিজ হাত দিয়ে খুঁড়েখেঁড়ে সৃষ্টি করেছে। এখন সে হাঁটতে পারে না, কোন কথাও বলে না। খেতে দিলে খায় কিন্তু শরীরে কোনো কাপড়-চোপড় রাখে না।”

বোয়ালমারী জর্জ একাডেমির সাবেক শিক্ষক, বোয়ালমারী পৌরসভার ছোলনা ছোলনা গ্রামের শওকত হোসেন মিয়ার ছেলে মানবিকযোদ্ধা মো. হেদায়েতুর রাফি (সুমন রফি) বলেন , “দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সেবা করতে গিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন রবিউলের সন্ধান পাই। আমি তার ও তার পরিবারের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি। যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে তাকে সুস্থ করা যেতে পারে। রবিউলের পিতা ছেলেটির উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি। কোন আর্থিক সামর্থ্যবান লোক রবিউলের চিকিৎসায় এগিয়ে এলে হয়তো ছেলেটি আবার সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেত। কেউ সহায়তার হাত বাড়ালে আমি তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে শেষ চেষ্টা করে দেখতে চাই।” স্থানিয় জনপ্রতিনিধিরা এত বছরেও অমানবিক জীবনযাপন করা রবিউলর খোঁজ খবর না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

খবর পেয়ে, বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ ৩০ জুলাই শুক্রবার দুপুরে ছুটে যান রবিউলকে দেখতে। তিনি রবিউলের পিতা ক্বারী নুরুল ইসলামের নিকট বিস্তারিত খোঁজ খবর নেন ও রবিউলের জন্য একটি পাকা ঘর নির্মাণ করতে পরামর্শ ও এ ব্যপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতার আশ্বাস দেন । সেই সাথে মানসিক প্রতিবন্ধী রবিউলের উন্নত চিকিৎসা করাতে সার্বিক সহযোগীতা করবেন বলে জানান তিনি। এ সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রবিউলের পরিবারকে খাদ্য সহায়তা ও নগদ ৫ হাজার টাকা আর্থিক সহয়তা দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, ময়না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির মো. সেলিম, শাহ জাফর টেকনিকাল কলেজের অধ্যক্ষ লিয়াকত হোসেন লিটন প্রমুখ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2025
Development by : JM IT SOLUTION
error: Content is protected !!