বোয়ালমারী প্রতিনিধিঃ ফরিদপুরে বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার বা গ্রাম্য দলাদলির অতি তুচ্ছ ঘটনা নিয়েও দেশি অস্ত্রের ঝনঝনানি, ভাঙচুর, লুঠতরাজ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল । প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে এসব গ্রামে প্রতিবছর হতাহত হয় অনেকে। এর মধ্যে কেউ কেউ সংঘর্ষে জড়িয়ে পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে আছে। আবার কেউ কেউ এসব সংঘর্ষের মামলায় সহায়সম্পদ হারিয়ে পথের ভিকারী।

এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ফরিদপুরে পুলিশ সুপারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন ধরনের দেশি অস্ত্র জমা দিয়েছেন উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের বিবদমান দুটি গ্রুপের লোকজন।

২৯ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৪টায় চণ্ডীবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে, বোয়ালমারী থানা পুলিশের ৪নং বিট পুলিশের বিশেষ আইন শৃঙ্খলা সভায় ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলীমুজ্জামান এর নিকট বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র সমর্পণ করে এলাকার বিবদমান দুটি গ্রুপের লোকজন।

এসময় ‘আর কাইজা ফ্যাসাদে না জড়ানোর’ অঙ্গীকারও করেন তারা। ইউনিয়নটিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম ফারুক হোসেন এর অনুসারী কাজী রফি উদ্দীন ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. চাঁন মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে সংঘাত চলে আসছিল। সামান্য বিষয় নিয়ে তারা ঢাল-সড়কি,বর্শা, রামদা, ছ্যানদা, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট ঘোষপুর দাঙ্গা কবলিত এলাকা হিসেবে পরিচিত । যার মধ্য চণ্ডীবিলা, লংকারচর, রাখালগাছি,পাকশিরচর অন্যতম। সম্প্রতি এসব এলাকায় সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন নিহত ও অসংখ্য আহত হয়েছে। বাড়ি-ঘর ভাংচুরে নিঃস্ব হয়েছে এলাকার মানুষ। মামলায় জড়িয়ে স্বাভাবিক জীবন বিঘ্নিত ছাড়াও এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলার অবনতি, মাদক, চোরাচালানসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছিল তারা ।

এ অবস্থায় স্থানীয় বিট পুলিশের উদ্যোগে পুলিশ সুপারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দুটি গ্রুপের লোকজন ৩৮টি ঢাল, ২৮টি সড়কি, বর্শা, ১৯টি রামদা,১টি চাপাতিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র জমা দেয়।

প্রধান অতিথি পুলিশ সুপার আলীমুজ্জামান তার বক্তব্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসা জনগোষ্ঠীকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি আগামী ৭ সেপ্টেম্বর এর মধ্যে কারো কাছে এসব অস্ত্র থাকলে পুলিশের নিকট জমা দিতে বলেন, এরপর কারো কাছে অস্ত্র পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি হুশিয়ার করেন।

বোয়ালমারী থানা অফিসার ইন চার্জ মোহাম্মদ নুরুল আলমের সভাপতিত্বে এবং থানা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. ওহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপার আলীমুজ্জামান ছাড়াও উপস্থিত ছিল সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান মিন্টু, ঘোষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম ফারুক হোসেন প্রমুখ।

বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম জানান-নানাভাবে বিবাদমান গোষ্ঠী দুটিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টার পরও তা সম্ভব হচ্ছিল না। অস্ত্র হাতের কাছে থাকায় সামান্য ঘটনায় একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে লিপ্ত হতো। অস্ত্র জমা দেওয়ায় তাদের মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।