1. khan261278@gmail.com : Oitijjho Bangla : Oitijjho Bangla
  2. oitijjhobangla24@gmail.com : Editor Panel : Editor Panel
  3. jmitsolution24@gmail.com : support :
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ০২:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বোয়ালমারীতে উৎসবমুখর পরিবেশে রথযাত্রা উৎসব অনুষ্ঠিত এক মৎস্যজীবীর বৈঠার আঘাতে মধুমতি নদীতে নিখোঁজ অপর মৎস্যজীবী বোয়ালমারীতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গাঁজা-ইয়াবাসহ আটক ৩ বোয়ালমারীতে সাবেক মেম্বারের বাড়িতে ডাকাতি, স্বর্ণালঙ্কার-টাকা লুট বোয়ালমারীতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে মারামারি, আহত ৬ বোয়ালমারীতে পাটজাত পণ্য তৈরি ও হাতপাখা বাজারজাত করণ প্রশিক্ষণের উদ্বোধন বোয়ালমারীতে শেখ রাসেল শিশু পার্ক উদ্বোধন বোয়ালমারীতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিক উদযাপন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বোয়ালমারী পুলিশের মতবিনিময় সভা ভাতা নয় পিতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান এক গণমাধ্যমকর্মী

ফরিদপুরের প্রচীনতম দূর্গাপূজা বোয়ালমারীতে

  • প্রকাশিত : সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২০
  • ৬১৪ জন পঠিত
আমীর চারু ।।  বাঙালী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজার আজ বিজয় দশমী । করোনা মহামারীর জন্যে সারা দেশের ন্যায় ফরিদপুরের বোয়ালমারীতেও এ বছর অনাড়াম্বরে উৎযাপিত হচ্ছে শারদীয় দূর্গা উৎসব। উপজেলাটিতে এবছর ১১৫টি মণ্ডপে উদযাপিত হচ্ছে দূর্গাপূজা। এর মধ্যে ফরিদপুরের সবচেয়ে প্রাচীনতম দূর্গোৎসব কর- বাড়ির দূর্গাপূজাও রয়েছে।
লোকশ্রুত আছে প্রায় আড়াইশ বছর ধরে হয়ে আসছে কর-বাড়ির দূর্গাপূজা।প্রতি বছর শরৎতের আশ্বিন মাসে পূজা উৎযাপিত হলেও পঞ্জিকার হিসাব মতে এ বছর পূজা পরেছে কার্ত্তিক মাসে। করোনাকালীন এ পূজাকে ঘিরে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
অতীতে দূর্গা পুজা বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব না হলেও পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজুদ্দৌলার পতনের পর থেকে জমিদার ও বনেদি হিন্দুদের বাড়িতে এ পুজার কদর বেড়ে যায়। তার আগে দূর্গাপূজার যে ইতিহাস পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় পঞ্চদশ শতকে সর্বপ্রথম বাংলায় দূর্গা পূজা করেন রাজা কংস নারায়ন রায়। অষ্টধাতুর নির্মিত মূর্তিতে সে পুজার ইতিহাস ৬ শত বছর পুরানো। যদিও এ নিয়ে মতভেদ আছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ বিক্ষিপ্ত কিছু ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে গেছে তাতে অতীতে দূর্গা পুজা ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে রাজা বা জমিদার শ্রেণির হিন্দুদের পুজা হিসাবেই পরিগণিত হত।
পলাশি যুদ্ধ জয়ের বিজয়োৎসব করতে ১৭৫৭ সালে কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়িতে রাজা নবকৃষ্ণ দেব দুর্গাপূজা শুরু করেন। জানা যায়, সে পুজায় রবার্ট ক্লাইভকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় । দেবী সন্তুষ্টির কারনেই পলাশী যুদ্ধ জয় সম্ভব হয়েছিল এমন ধারনা ইংরেজদের নিকট প্রতিষ্ঠিত করেন রাজা নবকৃষ্ণ। তখন থেকেই তার নির্দেশিত পথেই দুর্গাপূজা কলকাতার ধনিক বাবু সম্প্রদায়ের মর্যাদার প্রতীক হয়ে ওঠে। ইংরেজ শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় কলকাতা থেকে এ পুজা ছড়িয়ে পড়ে বাংলার প্রতিটি জমিদার বাড়ীর আঙ্গিনায়। সতের শতকেই বাঙ্গালির কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে দূর্গাপূজা ।
ধারনা করা হয় সতের শতকের কোন এক সময় ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গোহালবাড়ীতেও তিনটি বনেদি পরিবার পাল্লা দিয়ে শুরু করেন দূর্গাপূজা। জানা যায়, গোহালবাড়ীর কুণ্ডু, কর, কর্মকার পরিবারের পূর্বসূরিগণ অতীতে পাল্লা দিয়ে দূর্গা পুজা শুরু করেন। তিনটি পরিবারই বনেদি পরিবার হিসেবে স্বীকৃত ছিল। ছোটখাটো জমিদারি ছিল তাদের। কুণ্ডু বাড়ি এখনো জমিদার বাড়ি বলে এলাকায় পরিচিত, ৪৭-এ দেশভাগের পর কুণ্ডুরা দেশ ছেড়ে চেলে গেলেও এখনো তাদের বাড়ির পুরোনো ইমারত কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কুণ্ডুরা দেশ ছাড়ার পর বন্ধ হয়ে যায় কুণ্ডুবাড়ির পূজা।
দেশ স্বাধীনের পর কণ্ডুদের পথ অনুসরণ করে কর্মকাররাও ভারতে পাড়ি জমান। তবে কর্মকারদের জৌলুশতা হারায় আগেই। যে করণে দেশ ছাড়ার আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কর্মকারবাড়ির পূজা। কেবল নানা প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে নিরবিছিন্ন ভাবে প্রায় আড়াইশ বছর ধরে কর-বাড়ির দূর্গা পূজা অব্যাহত ভাবে চলে আসছে। তবে, কবে, কখন, কে এই পুজা চালু করে তার কোন দলিল পত্র নেই। করদের বর্তমান প্রজন্মের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ডাক্তার সরজ কর তার পুর্বপুরষদের নানা কীর্তিগাথা শুনান, সে সাথে গত সাত পুরুষের কষ্টি বংশপরম্পরা এক নিমেষে পাঠ করে জান তিনি । তার দাবি ‘বংশপরম্পরায় শ্রুত – ভূষণার নৃপতি রাজা সীতারাম রায়ের সময় থেকে কর-বাড়ির পূজা প্রতিষ্টা পায়।
সে সময় স্বর্ণ মোহর চালু ছিল, আর আদিকাল থেকে কর-বাড়ির পূজায় দেবীকে স্বর্ণের মোহর দিয়ে সিঁদুর পরানো হয়। যা আজও বহমান।’ যদিও এই একটি দাবি ও জনশ্রুতি ছাড়া এর পক্ষে কোন দলিল নেই। তবে একবাক্যে এলাকার মানুষ স্বীকার করে নিয়েছে কর-বাড়ির দূর্গা পূজা বহু পুরোনা। কর-বাড়ির অতীতের ধারাবাহিতা অনুসরণ করে এখনো কারো কাছ থেকে পূজা উপলক্ষে কোন প্রকার অনুূদান গ্রহণকরা হয় না। পুর্বপুরষগণ দেবী মূর্তি বানিয়ে দেওয়ার শর্তে পার্শ্ববর্তী গ্রাম লঙ্কারচরের পালদের দান করা গিয়েছিল শতবিঘা জমি, সেই দানে এখোনো বংশপরম্পরা প্রতিমা নির্মাণ করেন তারা।
এ বছর প্রতিমা নির্মাণ করেছেন প্রমথ পালের ছেলে প্রভাঞ্জন পাল, তিনিও জানান সাতপুরুষ ধরে তারা এ বাড়ির প্রতিমা বানিয়ে থাকে। এক সময় হাজার বিঘা জমির মালিক ছিলেন কর’রা। ছিল জোড়া-জোড়া ঘর, বড় নাটমন্দির, সুউচ্চ দেবী মন্দির, বাড়ির উপর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বৃহৎ একটি লাইব্রেরি, হাজার হাজার বই পত্র ঠাসা ছিল লাইব্রেরিঘর, কলকাতা থেকে ডাকে আসতো পত্র পত্রিকা। দূর্গাপূজা এলে দশদিন ধরে চলত যাত্রাপালা। নাটমন্দিরে বড় ডোলায় রাখা হত চিড়া,মুড়ি,খই থাকত নারকেলের নাড়ু। কাউকে হাতে করে দেওয়া হতনা তা,যার যার ইচ্ছামত তুলে নিত সবাই। দূর্গাপূজা এলেই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠতো কর বাড়ির আঙ্গিনা।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কুখ্যাত রাজাকার কোটন বাহিনীর লুটতারাজ আর অগ্নি সংযোগে পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায় করবাড়ির সমস্ত ঘরবাড়ি। যে কারণে এখন আর সে বনেদি জৌলুশতা পরিলক্ষিত হয় না তাদের। বনেদি জৌলুশ না থাকলেও দূর্গাপূজার রেওয়াজি কৃষ্টি এখনো পালন করেন তারা। জনশ্রুতি ছাড়া ইতিহাসের দলিল দস্তাবেজ না থাকলেও এটাই যে এ অঞ্চল তথা ফরিদপুরের প্রাচীনতম দূর্গাপূজা এ ব্যপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। আড়াইশ বছরে ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে এ বছরও জাঁকজমক ভাবে উদযাপিত হচ্ছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গোহালবাড়ীর করদের সবচেয়ে প্রাচীনতম পূজা।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2025
Development by : JM IT SOLUTION
error: Content is protected !!