টাইমস বাংলা ডেস্ক – ‘ফিনিশিং টাচ’ চলছে। মাঠে ঢোকার রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে বাঁশ দিয়ে। সদা সতর্ক রক্ষী ভালো করে জিজ্ঞাসা করে তবেই ঢুকতে দিচ্ছেন মাঠের মধ্যে। মণ্ডপ ও থিমের প্রয়োজনে লাগানো গুটি কয়েক জায়গায় মদু আলো জ্বলছে। বাকি চারপাশে শুধুই অন্ধকার।
অথচ গত বছরও মহালয়ার পরের দিন ছবিটা এমন ছিল না। আলোকজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল নাকতলা উদয়ন সংঘের মাঠ। ভিড় থাকত দর্শনার্থীদের। গত ১১ বছর ধরে যে পুজোর উদ্বোধন করতেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার তাঁকে বার দু’য়েক ইমেল পাঠিয়ে সাড়া মেলেনি। তাই এ বার উদ্বোধনে অন্য বৈচিত্র্য আনা হয়েছে বলে জানালেন সংঘের সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন দাস। খেটে খাওয়া বিভিন্ন পেশার মানুষই এবার নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজো উদ্বোধন করবেন বলে জানালেন তিনি। সেই তালিকায় রয়েছেন, রিক্সাচালক থেকে যৌনকর্মী।
এ বছর বছরের থিম ‘মোটা কাপড়’। কেন এই থিম? অঞ্জনের কথায়, ‘স্বদেশি যুগ করে শরণ করে এই থিম বেছে নেওয়া হয়েছে। যে ভাবে উদ্বাস্তু হয়ে মানুষে চল এসেছিলেন এ দেশে, তখন রুজি জোরগারের জন্য মেয়ে হাতে তুলে নিয়েছিল সুচ ও সুতো — তাকেই এই থিমের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। সুতোয় বোনা বেশ কিছু হাতের কাজের নিদর্শন রয়েছে এই থিমে। রয়েছেন খাদি আন্দোলনের জনক গান্ধী। এই পুজোর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন জেলে হেফাজতে। তার ‘বান্ধবী’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ছিলেন গত বছরের পুজোর মুখ। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এর প্রভাব কি পুজো সংগঠনে পড়েছে? স্পনসররা কি মুখ ঘুরিয়েছেন? অঞ্জন দাস জানালেন, তেমন কিছুই হয়নি। পুজোর আয়োজন অন্যান্য বারের মতো হয়েছে। স্পনসররাও কেউ হাত তুলে নেননি। প্রথম দিকে কিছুটা তারা কিছুটা ধন্দে ছিলেন। পরে সেই ধন্দ কাটিয়ে নিজেরাই এগিয়ে এসেছেন স্পনসর করতে। সম্পাদকের কথায়, ‘৩৪ বছর ধরে এই পুজো হচ্ছে। কোনও ব্যক্তি মানুষের উদ্যোগ নয়। ক্লাবের সদস্যরা ও এলাকার মানুষের উদ্যোগ এই পুজো। পার্থদা থাকলে হয়তো আরও ভালো হতো। তবু এ বছর কম কিছু হয়নি।’
কম না হলেও আক্ষেপ তো একটা থেকেই গিয়েছে। গত ১১ বছর ধরে যে পুজোর উদ্বোধন ‘দিদি’ করেছেন, এ বছর তিনি সময় দিতে পারলেন না। এ কী তবে পার্থ কাণ্ডের প্রভাব? ধরা গলায় অঞ্জনের উত্তর, ‘দিদি তো ব্যস্ত থাকেন, তাই হয়তো সময় দিতে পারেননি।’ তাঁর আশা আগামী বছর হয়তো ফের ‘দিদি’র হাতেই হবে পুজো উদ্বোধন।