টাইমস বাংলা ডেস্ক -স্নেহ, ভালবাসা, মমত্ববোধের মতো মানবিক অনুভূতির প্রকাশ কেবল মানুষই করে, তা নয়। অবলা জীবও অনেক সময়ই আচার-আচরণে এমন আবেগের প্রকাশ ঘটিয়ে থাকে। ব্যতিক্রম হলেও তা মাঝেমধ্যে ছুঁয়ে যায় আমাদের অনুভূতিকে। ঠিক যেমনটা হল পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে। ব্লক প্রশাসনের কার্যালয়ের পাশে হকার্স মার্কেটের কাছে মাতৃহারা এক বিড়ালছানার ‘মা’ হয়ে উঠেছে সারমেয়। অপত্যস্নেহে তাকে আগলে রাখছে সাদা-বাদামি কুকুর। চারপেয়ে এই মা-সন্তানের মিলমিশের নানা টুকরো ছবি সারাদিন ধরেই চাক্ষুষ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সদ্যোজাত এক বিড়ালছানাকে কেউ ফেলে গিয়েছিল ভাতারের মার্কেট কমপ্লেক্সের সামনে। মা-হারা বিড়ালছানাটির খাওয়াদাওয়া থেকে নজর রাখা সবকিছু সামলাচ্ছিলেন ওই মার্কেট কমপ্লেক্সের কয়েকজন ব্যবসায়ী। বিড়ালছানাটির আদর করে নাম রাখা হয়েছে ‘পুশি’। তবে এখন আর পুশির জন্য চিন্তা করতে হয় না স্থানীয় বাসিন্দাদের। দু’মাসের পুশিকে অপত্যস্নেহে পাহারা দিচ্ছে রাস্তার এক সারমেয় মা। বিড়ালছানার সঙ্গে সারমেয়র এই সখ্য নজর কাড়ছে পথচলতি মানুষদের।
পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজারে ব্লক প্রশাসনের কার্যালয়ের পাশেই হকার্স মার্কেট। পঞ্চায়েত সমিতির এই মার্কেটে রয়েছে বেশকিছু দোকানপাট। এই হকার্স মার্কেটের চত্বরেই বহাল তবিয়তে রয়েছে একটি রোগাপাতলা চেহারার বিড়ালছানা। ওই ব্যবসায়ীদের দৌলতে সময়ে সময়ে খাওয়াদাওয়া ঠিকঠাক জুটে যাচ্ছে। দেখা যায়, বিড়ালছানাটি কখনও একটি সারমেয়র সঙ্গে খুনসুটি করছে। আবার কখনও রাস্তায় সাপ দেখতে পেয়ে তাকে টানাটানি করে বিরক্ত করছে। হকার্স মার্কেটে চায়ের দোকান ও হোটেল চালান রতন মালিক। তিনি বলেন, “যখন বিড়ালছানাটিকে আমাদের মার্কেটের সামনে পড়ে থাকতে দেখি, তখন একেবারে সদ্যোজাত। ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারছিল না। কেবলমাত্র একটু করে দুধ খেতে পারছিল। কিছুদিন পর থেকে দুধ ভাত দেওয়া হচ্ছে। আমরা সবাই মিলেই বিড়ালছানাটিকে নজর রাখতাম। যাতে কোনও কুকুর এসে মারতে না পারে।”
ব্যবসায়ী হৃদয় কোঙার, বাবু শেখ, কিরু প্রামাণিকদের কথায়, “এখন পুশির জন্য আমাদের অত ভাবতে হয় না। বেশ কিছুদিন ধরেই রাস্তার একটি কুকুর পুশিকে পাহারা দিচ্ছে। পুশি ওর সঙ্গে খেলে। কখনও দেখি কুকুরটির স্তন্যপান করছে ওই বিড়ালছানা।” স্থানীয়রা জানান, ওই সারমেয়টির নিজের কোনও সন্তান নেই। তবে এখন গর্ভবতী। দুধ না পেলেও পুশি নিজের ইচ্ছামত কুকুরটির বুকে শুয়ে স্তন্যপানের চেষ্টা করে। সারমেয়টি বাধা দেয় না। বরং তাকে সবসময়ই আগলে আগলে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু রাস্তার অন্য কোনও কুকুরকে পুশির কাছে ঘেঁষতে দেয় না ওই সারমেয়টি। ব্যবসায়ীদের যখন কেউ পুশির নাম ধরে ডাকে, তখনই তার দোকানে হাজির সে। বিড়ালছানাটির এখন অবাধ বিচরণ ওই দোকানগুলিতেও। আর তার বাকি সময়টা কাটছে সারমেয় মায়ের সঙ্গে। এই সখ্যতা দেখে অভিভূত সকলেই।