টাইমস বাংলা ডেস্ক -স্ত্রীকে রাজনৈতিক আক্রমণ করার অভিযোগে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ‘দেখে নেবেন’ বলে প্রকাশ্যেই হুমকি দিয়েছিলেন বিদায়ী রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। বলেছিলেন, “সমস্ত তৃণমূল নেতারা আমার বিরুদ্ধে তোপ দাগলেও একমাত্র পার্থই সরাসরি আমার স্ত্রীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে। আমার স্ত্রী কোনও রাজনীতি করেন না, রাজ্য রাজনীতি নিয়ে কোনওদিন কোথাও কোনও মন্তব্য করেননি। অথচ একমাত্র পার্থই তাঁকে (স্ত্রী) আক্রমণ করেছে, তাই ওঁকে আমি কিছুতেই ছাড়ব না।” পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারি নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতর মাঝেই ধনকড়ের সেই হুঁশিয়ারি খটকার জন্ম দিয়েছে বলে মন্তব্য তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের।তৃণমূল প্রতিনিধিদল গত ২৮ জুন রাজভবনে স্মারকলিপি দিতে গেলে শাসকদলের সেই হেভিওয়েট টিমের কাছে এমনই ‘ভয়ংকর’ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ধনকড়। মঙ্গলবার একটি টিভি চ্যানেলের বিতর্কে রাজপালের সেই ‘বিস্ফোরক’ হুঁশিয়ারির উল্লেখ করে একটি ‘খটকা’র তথ্য তুলে কার্যত বোমা ফাটিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। অবশ্য একইসঙ্গে বারে বারে তৃণমূল মুখপাত্র সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে বলেছেন, “একবারের জন্যও বলছি না, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তার ও ইডি-র এই অভিযানের নেপথ্যে প্রাক্তন রাজ্যপালের সরাসরি কোনও ভূমিকা আছে। কাকতালীয় হলেও এটা ঠিক, উনি চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ২২ জুলাই ইডি-র অভিযান হয়, তাই ওঁর হুঁশিয়ারি নিয়ে একটা খটকা থেকেই যাচ্ছে।”শুধু তাই নয়, এদিন বিতর্কে অংশ নিয়ে কুণাল আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে সরাসরি রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। ইডি’র অভিযানের অনুমতির ইঙ্গিত করে তৃণমূল মুখপাত্র বলেছেন, “তৃণমূল প্রতিনিধিদের সেদিন ধনকড় জানান, আমার কাছে কয়েকটি ‘প্রেয়ার ফর প্রসিকিউশন’-এর ফাইল রয়েছে, সেগুলি নিয়ে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেব।” সেদিনের কথামতো প্রসিকিউশন অর্থাৎ ইডি’র গ্রেপ্তারি অভিযানের অনুমতি দিয়েই ধনকড় দিল্লিতে পাড়ি জমিয়েছেন বলেও ইঙ্গিত রয়েছে কুণালের কথায়।সারদা-নারদা-সহ নানা মামলায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতা ও মন্ত্রীদের গ্রেপ্তারির ক্ষেত্রে সিবিআই নিরপেক্ষ পদক্ষেপ করুক। শুধু তাই নয়, রাজ্য বিজেপি যেভাবে রাজ্যপালের পদের অপব্যবহার করছে তা অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। এমনই নানা দাবি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নেতৃত্বে গত ২৮ জুন আট সদস্যের প্রতিনিধিদল রাজভবনে ডেপুটেশন দিতে গিয়েছিলেন। আর ওই টিমের সঙ্গে আলোচনার মধ্যেই আচমকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে মন্তব্য করার জেরে ‘দেখে নেব’ বলে হুমকি দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যপাল। যদিও সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত ব্রাত্য বসু, শশী পাঁজা, তাপস রায় এবং কুণাল ঘোষরা বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে স্যর। আমরা আপনাকে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আক্রমণ করতে পারি। কিন্তু কখনওই তৃণমূল আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে না।” কিন্তু ব্রাত্যদের দাবি উড়িয়ে দিয়ে উলটে মন্ত্রী ও বিধায়কদের বিরুদ্ধে রাজ্যপালের অনুমতি চেয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সির ‘প্রসিকিউশনের প্রেয়ার’-এর যে তিনি অনুমতি দেবেন তা কার্যত হুঁশিয়ারির মেজাজে মুখ ফস্কে বলে ফেলেছিলেন ধনকড়।অবশ্য এদিন একাধিকবার কুণাল বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করেও বলেছেন, “একবারও বলছি না, রাজ্যপাল বদলা নিতেই ইডি’র এই অভিযান করিয়েছেন, কিন্তু উনি বাংলা ছাড়তেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে অভিযান হল, গ্রেপ্তার হলেন, বিষয়টি বড়ই খটকা।” ওই বিতর্কের অন্যতম বক্তা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও সিবিআইয়ের প্রাক্তন পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান উপেন বিশ্বাস দাবি করেন, “তৃণমূলের মহাসচিব পদ থেকে এক্ষুনি ইস্তফা দেওয়া উচিত গ্রেপ্তার হওয়া পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।”