টাইমস বাংলা ডেস্ক -কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীর রাজ্যপাল হওয়ার পথে মূল কাঁটা হয়ে দাঁড়ালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অন্তত সোমবার কেন্দ্রীয় বিজেপির তরফে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে তাতে স্পষ্ট, যদি বিরোধী দলনেতা পদে শুভেন্দু ইস্তফা দেন তবে বাংলায় রাজ্যপাল পদে শিশির অধিকারীর নাম বিবেচনা হতে পারে। কারণ, যদি রাজভবনে সত্যিই ধনকড়ের ছেড়ে যাওয়া পদে শিশিরবাবু এসে দায়িত্ব নেন, তখন বিরোধী দলনেতা ডেপুটেশন দিতে গেলে তো রাজ্যপাল পদটা হাস্যাস্পদ হয়ে যাবে। রাজ্যপাল বাবার কাছে ছেলের আবদার কীভাবে কার্যকর হবে? স্বভাবতই রাজ্যপাল পদের গুরুত্ব ধরে রাখতেই শিশির নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করে প্রথমেই বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন।
উল্লেখ, ২০০৯ সালে মনমোহন সিং মন্ত্রিসভায় নিজে জায়গা না পেলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব মেনে বাবা শিশির অধিকারীর নাম ঘোষণা হতেই রাতের বিমানে কলকাতা ফিরে আসেন তৎকালীন তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু। এবারও কেন্দ্রীয় বিজেপির প্রস্তাব মেনে নিলে বাবার রাজ্যপাল হওয়ার পথে কার্যত চিনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলনেতা।ধনকড় ইস্তফা দিতেই বাংলায় নতুন রাজ্যপাল পদে মুখতার আব্বাস নকভির পাশাপাশি শিশির অধিকারীর নামও উঠে এসেছে। ঘনিষ্ঠমহলে নাকি স্বয়ং শিশিরবাবু বাংলার রাজ্যপাল হলে তবেই কাঁথির সাংসদ পদে ইস্তফা দিতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মতো একাধিক বিজেপি নেতা এদিন রাজ্যের বাসিন্দা কোনও ব্যক্তির রাজ্যপাল হওয়া ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন। অবশ্য শিশির ঘনিষ্ঠরা পাল্টা যুক্তি দিয়ে এদিন বলেছেন, হীরেন মুখোপাধ্যায় ও শ্যামল সেন রাজ্যের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যপাল পদের দায়িত্ব সামলেছেন। যদিও শ্যামল সেন যখন রাজ্যপালে পদ শপথ নেন তখন তিনি কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ছিলেন। কিন্তু শিশির অধিকারী বাংলায় রাজ্যপাল হয়ে এলে ছেলে বিরোধী দলনেতা হিসাবে দাবি সনদ দিলে তা নিয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠবেই বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় বিজেপি।বাবা-ছেলেকে রাজ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা সমীচীন নয় বলে মনে করেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, শুভেন্দু বিরোধী দলনেতার পদ ছাড়তে রাজি নন। তবে শিশিরবাবুর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, প্রতিবেশী ওড়িশা বা দিল্লির রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব পেলে ভেবে দেখতে পারেন কাঁথির সাংসদ। কিন্তু এখন সাংসদ পদে ইস্তফা দিলে উপনির্বাচনে লোকসভা কেন্দ্রটি যে অধিকারী পরিবারের হাতছাড়া হবেই তা কার্যত নিশ্চিত। এমন প্রেক্ষাপটে শিশির অধিকারীর রাজ্যপাল হওয়া অধিকারী পরিবারের কাছেই শাঁখের করাত হয়ে উঠেছে ।এদিন দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি পদে ভোট দেওয়া নিয়ে ‘নেত্রীর কথামতো ভোট দিয়েছি’ বলে স্বয়ং শিশির অধিকারী যে মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। বলেছেন, “বিধানসভা ভোটের সময় প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে গিয়ে তৃণমূলকে গালাগাল দেওয়া শিশিরবাবু এখন দলত্যাগ বিরোধী আইন থেকে বাঁচতে এসব নাটুকে বিবৃতি দিচ্ছেন। আসল বাড়ির এক ছেলের ভুল রাজনীতির শিকার হয়ে বাবা কী করবেন তা নিয়ে নিজেই বিভ্রান্ত। আর ভাই দিব্যেন্দু দাদার ভুল সিদ্ধান্তের বলি হয়ে ঘুরছে, বেচারা, ওর জন্য করুণা হয়।”