টাইমস বাংলা ডেস্ক, উত্তরবঙ্গ –
সম্প্রতি দার্জিলিংয়ে গিয়ে চা-পর্যটনের কথা বলে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা শুনে মাথায় হাত চা বাগানের লাখ লাখ শ্রমিকের। প্রকাশ্যে তাদের অনেকে এর বিরোধিতা শুরু করেছেন। বিরোধিতা করেছেন চা বাগান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরাও।দার্জিলিং পাহাড় থেকে পাহাড়ের পাদদেশে তরাই এবং ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ জমি চা বাগানের জন্য বিখ্যাত। খাতায় কলমে প্রায় ২৮৩টি চা বাগান আছে এই অঞ্চলে। বাস্তব সংখ্যা আরো বেশি। পাহাড়ের চেয়ে ডুয়ার্স-তরাইয়ে চা বাগানের সংখ্যা বেশি। চা বাগানের আয়তনও বেশি। দার্জিলিং পাহাড়ের চা বিশ্বখ্যাত হলেও পরিমাণে অনেক বেশি চা তৈরি হয় ডুয়ার্স এবং তরাইয়ে। দিগন্ত বিস্তৃত সেই চা বাগান দৃশ্যত অপূর্ব হলেও সাম্প্রতিককালে এই শিল্প চরম সংকটের মুখোমুখি। গত এক দশকে একের পর এক বাগান বন্ধ হয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ চরমে পৌঁছেছে। চা বাগানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।চা মালিকদের একটি বড় অংশের দাবি, চা বিক্রি করে যথেষ্ট লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না তারা। বিরাট বিরাট চা বাগান রক্ষাণাবেক্ষণ করে, শ্রমিকদের পাওনা মিটিয়ে চা বাগান চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণেই গত এক দশকে একের পর এক বাগান বন্ধ হয়েছে বলে তাদের দাবি। বছর দশেক আগে বাগান বন্ধ করে দেওয়া এক মালিক নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘সরকার কেবলমাত্র শ্রমিকের স্বার্থ দেখে। মালিকদের সমস্যাগুলি বোঝার চেষ্টা করে না। সে কারণেই চা বাগানের সমস্যার কোনো সমাধানসূত্র মেলে না।’ বস্তুত, চা বাগান থেকে যে লাভ কমে গেছে, তা মেনে নিয়েছেন বিখ্যাত বাগান গিদ্দাপাহাড়ের মালিকও। ১৮৮০-র দশকে তৈরি এই বাগানের চতুর্থ প্রজন্মের মালিক শুধাংশু সাউ ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘চা থেকে আগের মতো আর লাভ পাওয়া যায় না। করোনাকালে বাজারের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বহু বছর সময় লাগবে।’ শুধাংশুর বক্তব্য, চা বাগানের সমস্যার নানা পরত আছে। বিষয়গুলি জটিল। সকলের স্বার্থের কথা না ভাবলে বাগান বাঁচানো কঠিন।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই চা বাগান নিয়ে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চা বাগানের লাভ বাড়ানোর জন্য চা পর্যটনের কথা বলেছেন তিনি। চা বাগানগুলিতে হোম স্টে তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। বস্তুত, কিছুদিন আগেও চা বাগানের সমস্যায় হস্তক্ষেপ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকারের তরফে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছিলেন তিনি। যার জেরে এখন ২৩২ টাকা দৈনিক মজুরি পাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের চা শ্রমিকরা।দার্জিলিংয়ের কোনো কোনো চা বাগানে ইতিমধ্যেই হোম স্টে তৈরি হয়েছে। পর্যটকরা সেখানে বেড়াতেও যাচ্ছেন। কিন্তু আদৌ কি এই ভাবে চা শিল্পকে বাঁচানো যাবে? এ প্রশ্ন তুলছেন খোদ বাগানের শ্রমিকরা। তাদের বক্তব্য, চা গাছ কেটে সেখানে হোটেল তৈরি করে চা বাগানকে বাঁচানো যাবে না। এতে বাগানের ক্ষতি আরো বাড়বে। দীর্ঘদিন ধরে চা বাগানে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন করেন বামপন্থী রাজনীতিক সমন পাঠক। শিলিগুড়িতে সিপিএমের পার্টি অফিসে বসে ডিডাব্লিউকে তিনি জানিয়েছেন, ‘চা শ্রমিকদের সমস্যা না মিটলে চা বাগান বাঁচানো কঠিন। সরকার এবং মালিকপক্ষ ওই বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। বাগানে পর্যটন গড়ে তুলে সাময়িক সমস্যার সমধান হতে পারে কিন্তু চা বাগানের ভবিষ্যত বদলানো যাবে না।’