টাইমস বাংলা ডেস্ক – মারকুটে ব্যাটার, দুর্দান্ত ফিল্ডার এবং উপযোগী বোলার। বিশ্বের সর্বকালের সেরা অল-রাউন্ডারদের তালিকায় যাঁর নাম থাকতে পারত, সেই সাইমন্ডসের নামের পাশে আজ রেকর্ডের ফুলঝুরি নেই। তার অন্যতম কারণ সম্ভবত তাঁর শৃঙ্খলাহীন জীবনশৈলী আর বিতর্কে জড়ানোর প্রবণতা। দেড় দশকের ক্রিকেট কেরিয়ারে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি সাইমন্ডসের। আবার সব বিতর্কের মধ্যেও খেলার প্রতি টান আর অস্ট্রেলিয়ার প্রতি ভালবাসা তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে ক্রিকেট বিশ্বে। সাইমন্ডস জন্মসূত্রে অস্ট্রেলীয় নন। তিনি ক্যারিবিয়ান বংশোদ্ভূত। খুব ছোটবেলায় এক ইংরেজ দম্পতি তাঁকে দত্তক নেন এবং অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন। সেই সূত্রে ব্রিটেনের পাসপোর্ট ছিল সাইমন্ডসের। সুযোগ ছিল ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার। এমনকী ১৯৯৫ সালে ইংল্যান্ড এ দলের হয়ে খেলার ডাকও পেয়েছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় নিজের পরিবার, প্রেমিকা এবং বন্ধুদের ছেড়ে যেতে রাজি হননি অ্যান্ড্রু। আসলে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। ১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক হলেও জাতীয় দলে পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নিতে সাইমন্ডসের সময় লেগে যায় ৪-৫ বছর। আসলে তাঁর জীবনের অন্যতম সমস্যা ছিল শৃঙ্খলার অভাব এবং অ্যালকোহল আসক্তি। ২০০৫ সালে একবার মদ্যপ অবস্থাতেই দলের অনুশীলনে নেমে পড়েন তিনি। যে কারণে দল থেকে বাদও পড়তে হয়। সাইমন্ডস ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি বাস্কেট বল খেলারও স্বপ্ন দেখতেন। অস্ট্রেলিয় দলে জায়গা পাকা করার আগে পর্যন্ত রাগবিতে চলে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন তিনি। এমনকী ব্রিসবেন ব্রঙ্কস নামের একটি পেশাদার দলের সঙ্গে অনুশীলনও শুরু করেন। কিন্তু এর মধ্যেই জাতীয় দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলায় ক্রিকেটেই ফিরে যান সাইমন্ডস। ২০০৮ সালের কুখ্যাত মাঙ্কিগেট বিতর্কের কথা প্রায় সকলেরই জানা। সাইমন্ডসের অভিযোগ ছিল, সিডনি টেস্ট চলাকালীন ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিং নাকি তাঁকে ‘মাঙ্কি’ বলে কটাক্ষ করেন। যদিও হরভজন জানান তিনি সাইমন্ডসকে মাঙ্কি বলেননি। তবে ভারতীয় ভাষায় গালাগাল দিয়েছিলেন। যে কারণে ভাজ্জিকে শাস্তির মুখেও পড়তে হয়। পরে অবশ্য মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলার সময় দুই তারকা নিজেদের মধ্যেকার সমস্যা মিটিয়ে নেন। ক্রিকেট কেরিয়ার শেষে রিয়েলিটি শো বিগ বসেও অংশ নেন সাইমন্ডস। ২০১১ সালের সেই ‘বিগ বস’ পর্ব রীতিমতো সাড়া ফেলে দেয় ক্রিকেট বিশ্বে। সে বছরই বিগ বসে অংশ নেন সেসময়ের পর্ন তারকা সানি লিওনি।
অ্যালকোহল প্রীতি বা শৃঙ্খলার অভাব, যাই হোক। ক্রিকেট মাঠে নামলেই সাইমন্ডস ছিলেন অন্যরকম। জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেন না। একার হাতে অস্ট্রেলিয়াকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন তিনি। দুর্ঘটনা কেড়ে নিল ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম বর্ণময় এই চরিত্রকে।