সঞ্জয় কাপড়ি, পূর্ব মেদিনীপুর, টাইমস বাংলা ডেস্ক – বিধবা বৌমাকে নিজের মেয়ে হিসাবে অন্যের হাতে সম্প্রদান করে নতুন জীবন দান করলেন তিনি। আর তাঁর দৌলতেই সোমবার অভিনব বিবাহ বাসরের সাক্ষী থাকল সুতাহাটার অনন্তপুর।
আর পাঁচটা সাধারণ হিন্দু বিবাহ অনুষ্ঠানের মতোই সোমবার ফুলের তোরণে সেজে ওঠে ঘাটি পরিবারের উঠোন। বসল নহবত, বাজল সানাই। সানাইয়ের মেদুলা সুর ও উলুধ্বনিতে মুখরিত ছাদনাতলায় ‘যদিদং হৃদয় তব, তদিদং হৃদয়ং মম’ মন্ত্রোচ্চারণ, অগ্নিসাক্ষী করে সিঁদুরদান, মালাবদলের মধ্য দিয়ে বিধবা বৌমা শুভ্রাকে হলদিয়ার যুবক মধু সাঁতরার হাতে তুলে দিলেন নকুল ঘাটি। একেবারে নিজের মেয়ে হিসাবে তিনি শুভ্রার কন্যা সম্প্রদান করলেন।
সুতাহাটার অনন্তপুরের বাসিন্দা নকুল ঘাটি পেশায় পুলকার চালক। তাঁর চিন্তাভাবনা আধুনিক। তাই বছর খানেক আগে একমাত্র পুত্রসন্তানের মৃত্যু হলেও বৌমাকে বেঁধে রাখতে চাননি। বরং নাতি থাকা সত্ত্বেও বংশ পরম্পরার কথা না ভেবে বেরঙিন হয়ে যাওয়া যুবতি বৌমাকে সাদা শাড়ির মোড়কে ঢেকে না দিয়ে জীবনে রঙ ঢেলে দিতে চেয়েছিলেন নকুলবাবু। তাই সামাজিক অবজ্ঞা উপেক্ষা করেই বৌমার বিয়ে দিলেন তিনি। রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ প্রচলনের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়েই একাজ করলেন বলে জানিয়েছেন নকুল ঘাটি। বৌমাকে নতুন জীবন দিতে পেরে আপ্লুত নকুলবাবু বলেন, ‘’আমি কোনও ভুল কাজ করছি না। বিদ্যাসাগর যা বলেছেন শুধু ইতিহাসের পাতায় থাকলে চলে না। সেগুলো করে দেখাতে হয়। আমার একমাত্র ছেলে বন্ধুকে দিতে যাওয়ার পথে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তারপর থেকে ওই বৌমা আমার কাছে মেয়ের মতো থাকে। বিদ্যাসাগরের থেকে প্রেরণা পেয়েই পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা করে এই মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করেছি।’’