টাইমস বাংলা ডেস্ক, কলকাতা – কলকাতার বেহালায় দেখা গেল ৩০০-রও বেশি লোকের জমায়েত। শারীরিক দূরত্বের বালাই নেই। অধিকাংশের মুখে নেই মাস্কও। চলছে ‘লিট্টি চোখা উৎসব’। আয়োজক মেয়র পারিষদ তারক সিং। এমনকী, এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খোদ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম-ও। যা, দেখে চোখ কপালে উঠছে শহরবাসীর।
গত ১৫ জানুয়ারি রাজ্যের করোনা বিধির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর অবধি করা হয়েছিল। সেই বিধি অনুযায়ী বিয়ের মতো জমায়েতে ২০০ জনের বেশি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না। কিন্তু, বেহালার ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডে, মেয়র পরিষদ তারক সিং-এর আয়োজিত লিট্টি-চোখা উৎসব, যেন এই সকল বিধির ক্ষেত্রে ছাড়পত্র পেয়েছে। খোদ তারক সিং-কেই মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। মঞ্চে চলছিল ভোজপুরী গান, সঙ্গে দূরত্বের কথা ভুলে গিয়ে নাচ, টাকা ছড়ানো। এমনকী, সকলের সঙ্গে নাচতে দেখা গিয়েছে মেয়র পারিষদকেও। ছিলেন তাঁর ছেলে তথা ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অমিত সিং-ও। এক সময়, এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম-ও। কার্যত দর্শকাসনের প্রথম সারি আলো করে তাঁকে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। তাঁর মুখে মাস্ক থাকলেও, তাঁর আশপাশে থাকা ব্যক্তিবর্গ ছিলেন মাস্কহীন। ওই বিপুল জমায়েত দেখেও কিন্তু মেয়রের দিক থেকে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বরং তাঁকে বসে বসে ভোজপুরি গানে তাল দিতে দেখা গিয়েছে। সাংবাদিকরা এত লোকের জমায়েত নিয়ে প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে, তিনি কোনও জবাব না দিয়ে চলে যান।
তবে, জমায়েতের বিষয়ে একেবারেই অস্বস্তি ছিল না তারক সিং-এর। তিনি দাবি করেন, তাঁরা সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছেন এবং সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই নাকি এই অনুষ্ঠান করেছেন। তাঁর দাবি, এই অনুষ্ঠান ছিল, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে কলকাতায় এসে বসবাস করা হিন্দিভাষীদের জমায়েত। যেখানে তাঁরা বাংলার মানুষের কীকরে ভাল করা যায়, সেই বিষয়ে আলোচনা করেন এবং সকল বিভেদ ভুলে হিন্দিভাষীরা একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কোভিড বিধি ভাঙার অভিযোগ তিনি মানতেই চাননি। তাঁর দাবি, যা হচ্ছে বিধি মেনেই হচ্ছে। বিপুল জমায়েতের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সব লোগ আরাহা হ্যায়, খানা খা রাহা হ্যায়, ওর যা রাহা হ্যায়। কোনও অসুবিধার তো কিছু নেই।’ শাসক দলের মেয়র পারিষদ, যাদের উপরে কিনা শহরের মহামারি ঠেকানোর দায়িত্ব, তাদেরই মহামারি বিধি নিয়ে এমন ঢিলেঢালা মনোভাব দেখে স্তম্ভিত চিকিৎসক থেকে সাধারণ মানুষ। খোদ মেয়রের উপস্থিতিতে, এত বড় কোভিড বিধি লঙ্ঘন কী করে ঘটতে পারে, প্রশ্ন উঠছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, তাহলে রাস্তায় বেরিয়ে মাস্ক না পরলে ধরছে কেন পুলিশ? ‘কোনও অসুবিধার তো কিছু নেই।’ নাকি আছে?