ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ রাজ্যেরই মোট বাসিন্দা নদিয়া জেলার থেকে অনেক কম। অথচ পূর্ণ রাজ্যের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ভোগ করছে রাজ্যগুলি। আসাম বাদ দিলে ছোট ছোট রাজ্যগুলি জেলার সংখ্যা বাড়িয়ে রাজ্যবাসীর রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে চলেছে। ফলে সমাজের সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে ফারাক বেড়ে চলেছে। স্থানীয়দের অনেকেই দাবি তুলেছে, রাজ্য পুনর্গঠনের। কিন্তু সর্বভারতীয় দলগুলি নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে আঞ্চলিক দলগুলিকে সমানে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে।
উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্যই পূর্ণ রাজ্য। তাই প্রতিটি রাজ্যেই রয়েছেন রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে অগণিত ভিভিআইপি। এছাড়াও সেনা ও আধাসেনাবাহিনীও রয়েছে। প্রতিটি রাজ্যেই রয়েছে অনেকটা দার্জিলিং- এর মতো স্বশাসিত জেলা পরিষদ। তাঁদের কর্মকর্তারাও রয়েছেন। ফলে রাজ্যগুলিকে সেই ব্যায় বহন করেই ধরে রাখতে হচ্ছে পূর্ণ রাজ্যের তকমা। কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির জন্য অবশ্য মোট বাজেটের ১০ শতাংশ খরচ করেন। রয়েছে আলাদা মন্ত্রকও। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দুর্নীতি আর প্রশাসনিক হাতি পুষতেই খরচ হচ্ছে উন্নয়নের যাবতীয় অর্থ। সঙ্গে রয়েছে জঙ্গি ততপরতার নামে অবাধে লুঠপাটের অঘোষিত বন্দোবস্ত। ফলে মার খাচ্ছে উন্নয়ন।
জনসংখ্যার হিসাবে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাজ্য আসাম। সেখানকার লোকসংখ্যা সাড়ে তিন কোটি। পশ্চিমবঙ্গের এক তৃতীয়াংশেরও কম। অথচ পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার বিপরীতে আসামের জেলার সংখ্যা ৩৩। জনসংখ্যায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য ত্রিপুরা। জনসংখ্যা ৪০ লাখেরও কম। মোট জেলা ৮। সবচেয়ে ছোট রাজ্য সিকিমের ৬ লাখের কিছু বেশি মানুষের জন্য জেলার সংখ্যা ৬। মিজোরামে ১৩ লাখ লোকের জন্য রয়েছে ১১টি জেলা। নাগাল্যান্ডে ২৩ লাখ মানুষের জন্য রয়েছেন ১৫ জন জেলাশাসক। জেলাশাসকের পাশাপাশি রয়েছে এসডিও-বিডিও থেকে শুরু করে পঞ্চায়েতের কর্তারা। তাই বেতন দিতেই খরচ হচ্ছে প্রচুর টাকা। মার খাচ্ছে উন্নয়ন। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধান হতে যতো ভোট লাগে উত্তর পূর্বাঞ্চলে বহু রাজ্যে সেই ভোট পেয়ে হেসেখেলে বিধায়ক হওয়া যায়। রাজ্যের সভাধিপতিদের থেকেও কম ভোট পেয়ে অনায়াসেই মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন উত্তর পূর্বাঞ্চলের বহু রাজ্যে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সমান অধিকার ভোগ করছেন তাঁরা। তাই নতুন করে রাজ্য পুনর্বিন্যাসের দাবি উঠছে। কারণ ছোট রাজ্যের ফলে সাধারণ মানুষ বা প্রান্তিক মানুষদের কোনও উপকার হচ্ছেনা।