টাইমস বাংলা ডেস্ক – ত্বকে কালো ছোপ দেখে অনেকেই মনে করেন এগুলি হয়তো ময়লা জমছে। এই অছিলায় অন্য সমস্যা প্রকাশ পায়। বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধ্যাপক ডা. গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়। রোজ চলতে ফিরতে চোখে পড়ে একটু যাদের ওজন বেশি তাদের গলার কাছে যেন ময়লা জমার মতো দাগ, হাতের কনুইয়ের খাঁজে কালো ছোপ। অনেকের আবার বগল, কুঁচকির কাছেও এমন লক্ষণ দেখা যায়। যা আপাতদৃষ্টিতে নোংরা জমেছে মনে হলেও, এটি কিন্তু একধরনের ত্বকের সমস্যা। অনেকেই তা বোঝেন না। ফলে চিকিৎসা করানো তো দূর অস্ত। এটা অ্যাকান্থোসিস নিগ্রিকানস, ত্বকের এই প্রকার সমস্যার পোশাকি নাম ‘অ্যাকান্থোসিস নিগ্রিকানস’। এই অসুখে শরীরে যে যে স্থানে খাঁজ বা ভাঁজ থাকে সেই স্থানগুলিতেই এমন সমস্যা দেখা যায়। শরীরের এই সব অংশের চামড়া মোটা হয়ে যেতে থাকে। চামড়ার স্তর জমতে জমতে তা কালো হয়ে যায়। গলা, হাতের আঙুল ও পায়ের আঙুলের মাথাতেও চামড়াও পুরু হয়ে এমন হয়। কালো ছোপ ছাড়া আর কিছু সমস্যা থাকে না এই রোগে। অধিকাংশ রোগীই এসে বলেন অনেকদিন ধরেই ময়লা পড়েছে, কিছুতেই এই ছোপ উঠছে না। তখনই পর্যবেক্ষণ করে এই রোগ নির্ধারণ করা হয়। রোগীকে বোঝাতে হয় যে এটা এক ধরনের ত্বকের সমস্যা। তারপর কারণ নির্ণয় করা হয়। বয়স্ক ও অল্পবয়সি সকলেরই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কেন এমন হয় ?
১। অনেক সময় বংশগত কারণেও এই সমস্যা হতে পারে। যাঁদের ওজন বেশি তাঁরাই বেশি এতে আক্রান্ত হন।
২। শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থাকলে তাঁদের এই সমস্যা হয় ।
৩। যাঁদের ত্বকে এমন সমস্যা থাকে, তাঁদের ভবিষ্যতে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে।
৪। কিছু ওষুধ দীর্ঘদিন খেলেও এমন হতে পারে। যেমন, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ, ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল।
৫। কোনও রকম হরমোন্যাল ইমব্যালান্স থাকলে ত্বকে এইরকম ছোপ প্রকাশ পায়। যেমন, থাইরয়েড, স্টেরয়েড হরমোন বেশি থাকা (কুশিং সিনড্রম)।
৬। এছাড়া অনেক সময় শরীরের অভ্যন্তরীণ কিছু ক্যানসার হলেও এই লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। যাঁদের বয়সকালে এই লক্ষণ প্রকাশ পায় তাঁদের ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
অবশ্যই মানতে হবে এই নিয়মগুলি
১। জলপান বেশি, ফল খেতে হবে নিত্য, সবজি রাখতেই হবে ডায়েটে।
২। তেল-মশলা, ফ্যাট জাতীয় খাবার বাদ রাখতে হবে। মিষ্টি, কার্বোহাইড্রেট কম খেতে হবে।
৩। একসঙ্গে বেশি খাওয়া নয়, অল্প অল্প করে বারে বারে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
কী করলে দাগ উঠবে?
প্রথমত, ওজন বেশি থাকলে তা কমাতে হবে। ডায়েট মেনে খেতে হবে ও এক্সারসাইজ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, অ্যাকান্থোসিস যদি কোনও ওষুধের প্রভাবে হয় সেক্ষেত্রে কিন্তু সেই ওষুখ বন্ধ করতে হবে।
তৃতীয়ত, থাইরয়েড থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
চতুর্থ, এগুলি মেনে চলার পাশাপাশি আমরা এই রোগের জন্য ত্বকে লাগানোর ওষুধ দিই। যা নিয়ম মেনে লাগানোর ফলে সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।