অনিসা মান্না,কলকাতা, টাইমস বাংলা ডেস্ক – এটা কোন ভূতের গল্প নয়। গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে দপ্তর খুলে সিসটেমেটিক প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশন- রিসার্চ অ্যান্ড ইনটেলিজেন্স টিম বা ‘স্পিরিট’ নামে একটি দল কিছু অদ্ভুত বা আধিভৌতিক অভিজ্ঞতার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বারবার। এইসব ঘটনা বলার অর্থ মানুষকে সতর্ক করা। যাতে মানুষ এমন কোন পরিস্থিতির সামনে পড়লে কোন সিনেমা বা কোন গল্পের কথা ভেবে আরো ভীত না হয়ে যায়। নিজের মস্তিষ্কের ওপর কাবু রাখার ক্ষমতা যেন পায় সে। তারই জন্যে তাদের কিছু কিছু অভিজ্ঞতার কথা জানান হল।
১. ঘটনা ও তার চরিত্রদের স্বার্থে জায়গা বা ব্যক্তিদের নাম গোপন থাকবে। এটা স্পিরিটের আবেদন। কোভিড পরিস্থিতির আগে একটি কল সেন্টারের ঘটনা। একটি ঘরের দরজা বারবার বন্ধ হয়ে যায়। পায়ের শব্দ মেলে। কলের জল খুলে দেয় কেউ। তদন্তকারী দলের কাছে আবেদন আসে। তাঁদের মধ্যে একজন সৌমেন রায়, দ্বিতীয়জন প্রণয় গঙ্গোপাধ্যায়। দু’দফায় পরীক্ষায় বসেও প্রথমটায় কিছু মেলেনি। পরের দফায় পরীক্ষা করতে গিয়েই আচমকা চমকটা লাগে। নির্দিষ্ট একটি কোনের উষ্ণতা আচমকা বেড়ে যায় দশ ডিগ্রি। ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ডের জেরে জ্বলে ওঠে নির্দিষ্ট যন্ত্রের কিছু আলো। আচমকা আবার ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করে দু’জনেরই। প্রণয়ের কথায়, “ব্যাটারির চার্জ দেখলাম আচমকা ৭০ শতাংশ থেকে কমে ৩০ শতাংশ হয়ে গেল। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল।”কথা শেষ হয়নি প্রণয়ের। সৌমেন জানালেন, “হঠাৎ সামনের দরজাটা সশব্দে খুলে গেল। অথচ সিসিটিভিতে দেখা যায় সেখানে কেউ ছিল না। সঙ্গে পরপর কিছু ঘটনা। বেসিনের কাছে পায়ের দ্রুত শব্দ। এর কোনও ব্যাখ্যা নেই।”
তাহলে যাঁরা এমন সমস্যায় পড়ে আপনাদের ডেকেছিলেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী? জবাবে সৌমেন বললেন, “আমরা এই ধরনের কিছু অভিজ্ঞতা শুধু জানিয়ে দিই। কখনও তাদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় দেখা যায় ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হয়েছে কিছু বিদ্যুতের তারের জন্য। তার জন্যও এমন অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। আমরা বলি এই পরিস্থিতিতে ভয় পাওয়া স্রেফ মস্তিষ্কের খেয়ালে। তার সঙ্গে মেশে পৌরাণিক গল্প।” প্রণয়ের কথায়, “যদি একবার সাহস সঞ্চয় করে নিতে পারেন, তবে এটা একটা অভিজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবু সত্যিকারের ‘এনার্জির’ সক্রিয়তা রয়েছে বলে জানাচ্ছে স্পিরিট। মূলত তাদের রেসিডুয়াল হন্টিং, ইন্টেলিজেন্স হন্টিং, ডেমনিক হন্টিং আর পোল্টারজাইস্ট হন্টিং এই চারটি ভাগে তাদের ভাগ করা যায়। ডেমনিক ছাড়া বাকি তিনটির নিদর্শনই ভারতীয় উপমহাদেশে মেলে বলে জানাচ্ছে দলটি। যদিও ইতিমধ্যে একাধিকবার এসবকে স্রেফ ‘বুজরুকি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের মতো একাধিক সংগঠন। তবু মানুষের দুর্বল মনে ভর করে ‘ভৌতিক’ নানা গল্প ডালপালা ছড়ায়। ভূতচতুর্দশীর প্রাক্কালে যারা বারবার স্মরণে আসে।
২. ৩০০ বছর আগের একটি রাজবাড়িতে একবার এই দলকে যেতে হয়েছিল তদন্তে। প্রণয় এই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে মনে করিয়ে দেন, “আমরা আমাদের সঙ্গে ‘ভূতে’ অবিশ্বাসী এক ব্যক্তিকেও নিয়েছিলাম। যাতে তার তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে।” নিয়মমতো তদন্ত শুরু হয়। নানা প্রশ্নের জবাবে কিছু সাঙ্কেতিক শব্দ আমরা পাচ্ছিলাম। সঙ্গের ব্যক্তিটি জানতে চান তিনি কোনও প্রশ্ন করতে পারেন কিনা। অনুমতি পেয়ে নিজের মায়ের নাম জিজ্ঞাসা করেন। সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা অস্পষ্ট শব্দে জবাব আসে। সময় না দিয়ে আচমকা ঝোড়ো হাওয়া। দোতলার বাইরের করিডরে টুং করে একটা শব্দ। যেন কারও হাতের আংটি ঘষা লেগে গিয়েছে রেলিংয়ে। দৌড়ে গিয়েও দূরদূরান্তে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে সেই প্রশ্নের জবাবের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মায়ের নামের জবাব ঠিক পেয়েছিলেন ব্যক্তিটি।
৩. ডেমনিক হন্টিংয়ের নিদর্শন পশ্চিমের দেশগুলিতে মিললেও কলকাতার কাছেই অবশ্য এমন একটি ঘটনা ঘটেছে বলে জানাচ্ছে স্পিরিট। বছর ত্রিশের এক যুবতীর দ্বৈত চরিত্র। মাঝেই মাঝেই আচমকা অন্য একটি চরিত্রে ঢুকে পড়ছে মেয়েটি। তখন সে একটি বছর দশেকের মেয়ে। বছর চল্লিশ আগে তার উপর শারীরিক অত্যাচারের কথা আচমকা বলে উঠছে। কথাগুলো যখন সে বলছে, তখন তার গায়ে ফুটে উঠছে রক্তের দাগ। সৌমেনের কথায়, “এ জিনিস যদি সত্যি হয়, তবে তাকে ডেমনিক হন্টিংয়ের ঘটনা বলা হবে। কিন্তু এমন আদৌ সম্ভব কিনা তা জানতে আমাদের সাহায্য নিচ্ছে একটি চিকিৎসক দলের।” গোটা ঘটনা নিয়েই এখন তদন্ত চলছে।