সুখেন্দু আচার্য
বিশিষ্ট সাংবাদিক
কেরলকে ভগবান তার অকৃপন হস্তে অফুরন্ত ভালবাসা দিয়ে সাজিয়ে তুলেছে। লোকে বলে ভগবানের দেশ বা god’s own country। সেই কেরলে বেড়াতে যাব, আর মুন্নার যাব না তাই হয় নাকি? অতএব যাত্রা শুরু কোচি থেকে মুন্নার। এমনি কেরলের পাহাড়ের জায়গা বলতে মুন্নার। আমাদের রাজ্যে যেমন দার্জিলিং। মুন্নারকে পশ্চিমের গেটও বলা হয়। ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশরাই মূলত এখানে বসবাস করত। কেরলের লুডুকি জেলার এটি একটি পাহাড়ি শহর। এখানে সুন্দর পরিবেশ ও আবহাওয়া ভাল থাকে মূলত ২০ ডিগ্রি টেম্পারেচার মধ্যে থাকে। তবে ওখানে বেড়াতে যাওয়ার সব থেকে ভাল সময় হল ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী। তখন কখনো কখনো ১০ ডিগ্রি টেম্পারেচারে নেমে আসে। কোচি থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে মুন্নার যাওয়ার পথে পাহাড়ি রাস্তা হলে কি হবে, সবুজ সুন্দরী তার দুহাত বাড়িয়ে যেন গায়ে আলতো করে স্পর্শ করে যাচ্ছে। পাহাড়ের কোলে কোলে চা বাগানের শারি।
মুন্নারে থাকার জন্য অনেক হোটেল রয়েছে। ভাড়াও আয়ত্তের মধ্যে, রাতে একটা হোটেল ঠিক করে থাকলাম। সকাল হতেই গরম গরম পরোটা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম মুন্নারকে দেখাতে । ওখানকার মানুষ ভীষণ অতিথি পরায়ণ। চা বাগান দেখতে দেখতে কিছু দূর গেলে এরভেকুলাম ন্যাশনাল পার্ক। এখানে হাতি আপনাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে পারে। এখানে কখন যে আপনার সময় কেটে যাবে বুঝতে পারবেন না। কিন্তু তা করলে তো চলবে না। চা বাগান ও ওয়াটার ফলস যে আপনাকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে। সেই মোহিনী ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকা যায় নাকি। চা বাগানের মধ্যে ছায়া দেওয়ার জন্য যে বড় গাছ রয়েছে সেই গাছে অসীম প্রেমে জড়িয়ে লতিয়ে উঠেছে গোলমরিচের গাছ। এবার পৌঁছনো গেলো, নীলাকুরিঞ্জি ফুলের বাগানে । এখানে হরেক রকমের ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে। তবে লোকে বলে নীলাকুরিঞ্জি ফুলের বাগান। এই ফুল বারো বছর পর পর ফোটে। যা দেখা আমাদের কপালে জোটেনি। পাহাড়ি ঝর্ণা, চা বাগান, মেঘ পাহাড়ের লুকোচুরি খেলা দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে এলো বুজতেই পারলাম না। কখন যে মনে মনে গুন গুন গান ধরেছি – “হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ুরের মত নাচেরে…..”