টাইমস বাংলা ডেস্ক – দেবভূমি উত্তরাখণ্ডে নেমেছে প্রবল তুষারধস । যার কবলে প্রাণ যাচ্ছে ট্রেকারদের। তাদেরই মধ্যে প্রাণ গেল , কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গের ৩ যুবকের। ছোটবেলা থেকেই ট্র্যাকিংয়ের প্রতি আগ্রহ থাকায়। উত্তরাখণ্ডে ট্রেকিং করতে গিয়েছিলেন বাংলার ৩ যুবক। তাদের আর বাড়ি ফেরা হল না। তরতাজা তিনটি প্রাণ চলে যাওয়ায় তাদের পরিবারের মানুষ শোকাস্তব্ধ। পায়রাডাঙার বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সি প্রীতম রায়, একটি ট্রেকিং দলের সদস্য হয়ে পাহাড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন, তাঁর খোঁজ নেই। আর হাওড়ার বাগনানের মুরালিবাড়ের সাগর দে (২৭), সরিৎশেখর দাস (৩৫) ও চন্দ্রশেখর দাস (৩৪) কুমায়ুন রেঞ্জে সুন্দরডুঙ্গায় ট্রেকিংয়ে গিয়ে তুষারধসের কবলে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যান। উদ্ধারকারী দলের তরফে জানানো হয়েছে এঁদের সকলের দেহ মিলেছে। তবে উত্তরাখণ্ড সরকার এখনো পর্যন্ত তাদের মৃত্যুকে সরকারি ভাবে ঘোষণা করেনি।
হোামিওপ্যাথ পড়াশোনার পাশাপাশি হাওড়ার ট্রেকিং সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন রানাঘাটের পায়রাডাঙার পূর্ব গোপালপুরের প্রীতম রায়। এবার রওনা দেওয়ার পর শেষবার মা-বাবার সঙ্গে কথা হয় ১১ অক্টোবর, সন্ধে সাড়ে সাতটায়। বাড়ির লোক জানতেন ছেলে এদিনই বাড়ি ফিরবে। ছেলের বাড়ি ফেরার পরিবর্তে এসেছে চরম দুঃসংবাদ। প্রীতমের বাবা প্রমীলকান্তি রায় ও মা রীতাদেবী কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত গ্রামীণ চিকিৎসক প্রমীল কান্তি বাবু উত্তরপ্রদেশে কর্মরত ছিলেন। সেই দেখেই ছেলের ট্র্যাকিং করার ইচ্ছা। ছেলেকে ভরতি করেছেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে, হোমিওপ্যাথ কোর্সে। ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র প্রীতমের একটি ছোট বোনও রয়েছে। ট্রেকিং করতে গিয়ে ছেলেরই এমন চরম পরিণতিতে গোটা পরিবার ভেঙ্গে পড়েছে। শোকের কালো ছায়া নেমে এসেছে পরিবারের বুকে। পেশায় গানের স্কুলের শিক্ষক, বাগনানের সরিৎ বছর দুয়েকের একটি মেয়ের বাবা। তাঁর জ্যেঠতুতো দাদা চন্দ্রশেখরের পারিবারিক ব্যবসা, তিনি বাগনান ১ নম্বর ব্লকের খালোড় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যও বটে। আর সাগর পেশায় হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক। সাগর-সরিতের ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকলেও চন্দ্রশেখরের কার্যত ছিল না। সরিতের বাবা তুষার দাস ও সাগরের বাবা সলিল দে-ও ট্রেকার। তাঁরাও বিলক্ষণ জানেন, পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে থাকে বিপদ । কিন্তু তারা কল্পনাও করতে পারিনি, ছেলেদের এমন ভয়ানক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে। তিন বাড়িতে কার্যত রান্না খাওয়ার পাট চুকেছে। সাগরের মা সোনালিদেবী মাঝে মাঝে কেঁদে উঠছেন। ওখানে বসেই তুষারবাবুর আক্ষেপ, “আমার পাহাড়ের নেশা ছেলের ঘাড়ে চাপলো! নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না।” তাদের সান্তনা দেওয়ার ভাষা হারিয়েছে প্রতিবেশীরা।
বাগেশ্বর জেলার এসপি অমিত শ্রীবাস্তব শুক্রবার ফোনে জানান, নিখোঁজ ট্রেকারদের সন্ধানে এদিন ফৌজি হেলিকপ্টার উড়ে গিয়েও ফিরে আসে। আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে । পদাতিক উদ্ধারকারী দল রওনা দিলেও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি। তবে ট্রেকারদের সঙ্গে থাকা কয়েকজন পোর্টার ফিরে এসে জানিয়েছেন, তাঁরাও সরিৎ, চন্দ্রশেখরদের হদিশ পাননি। এদের টিম গত ১০ অক্টোবর কলকাতা থেকে ট্রেনে রওনা দিয়েছিল। বরেলিতে নেমে গাড়িতে হলদোয়ানি হয়ে জাইকুনি। সেখান থেকে ১২ তারিখে ট্রেকিং শুরু, সঙ্গে গাইড ও চার পোর্টার। জাগুলি হয়ে ১৪ তারিখে কাঁঠালিয়ায় গিয়ে বেসক্যাম্প করেন। ওখান থেকে কানাকাটা-সহ কুমায়ুন রেঞ্জের বিভিন্ন শৃঙ্গের দিকে যাওয়ার কথা ছিল। তারই মাঝে দেবীকুণ্ডে ওই প্রাকৃতিক বিপর্যয়। রাতে ওই ট্রেকারদের মৃত্যুর খবর আসে। রাতেই দেহগুলি উদ্ধার করা হয় কানাকাটা পাসের কাছে।