সুখেন্দু আচার্য, বিশিষ্ট সাংবাদিক
কালোমানিকের রাজ্য একদিকে পাহাড়, আরব সাগরের তীরে অজস্র বনরাশির রাজ্য কেরল। লোকে বলে কেরল সুন্দরী। সেই কেরলে ব্যাকওয়াটার না দেখলে কেরল ঘোরাটাই বৃথা। তাই চললাম ব্যাকওয়াটার দেখতে। ব্যাকওয়াটার দেখার জন্য ছিল যেমন কম্পিত হৃদয়। তেমনি ছিল অদম্য উৎসাহ। শেষমেষ চেপে বসলাম হাউসবোটে, ঠিক যেন লঞ্চের মত। একতলা, দোতলা লঞ্চ। আমি দোতলায় চালকের কাছে বসলাম। দোতলায় হাউসবোটের চারিদিক খোলা। চেয়ার পাতা। চালক হাউসবোট চালাতে শুরু করলো। আমি লক্ষ্য করলাম, অজস্র জলরাশির মধ্য তার বুক চিরে আমরা এগিয়ে চলেছি।
ব্যাকওয়াটারের দুই দিকে গ্রাম দেখা যাচ্ছে। হাউসবোটের মজা হল, আমরা যেন ঘরের মধ্যে থেকে জলবিহারে চলেছি। এরই মধ্যে আমাদের সঙ্গী কেউ যেন রবীন্দ্র সংগীত গাইতে শুরু করলো। গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ । তার সঙ্গে দেখলাম অনেকেই গলা মেলাতে শুরু করলো। এর মধ্যে দুই কূলে দেখা গেল, নারকেল গাছের শাড়ি। শাওয়ারিকে বললাম, কূলে ভেড়াও, নারকেল খাবো। ব্যাকওয়াটারের এক তীরে তরী ভেড়ালো চালক। নেমে আমরা দেখলাম, একজন ঝুপড়ি ঘর করে ডাব, নারকেল, ও নারকেল জলের রস, বা চলতি কথায় তাড়ি বিক্রি করছে। আমরা অনেকেই এই সবার স্বাদ নিলাম।
ফের যাত্রা শুরু। দেখলাম ব্যাকওয়াটারের দুই তীরে প্রচুর ধান চাষ হয়েছে। আমাদের মত মাটির নিচের জল তাদের ব্যবহার করতে হয় না। এক সময় লক্ষ্য করলাম দুটি পানকৌরি অনাবিল আনন্দে জলে ডুবছে, মাছ ধরছে, আর খাচ্ছে, এই দেখতে দেখতে আমাদের কেটে গেছে বেশ কয়েক ঘন্টা। এসে পড়লাম সাগরের মোহনায়। লোকে বলে কেরলের বিখ্যাত নৌকো বাইচ এখানেই হয়। চোখের সামনে যেন ভেসে উঠলো সেই নৌকো বাইচ। ততক্ষনে সূর্য অস্তাচলের পথে। পশ্চিম আকাশে রক্তিম আভায় ভরে গেছে। এবার আমাদের নামার পালা। আমরা আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেছি।